অর্থ ও বাণিজ্যএক্সক্লুসিভজাতীয়বাংলাদেশব্যাংকিং

ডলার সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধে এলসি খোলা বন্ধ

নিত্যপণ্য ও রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য বেশির ভাগ তফসিলি ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলছে না। ডলার সংকট ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধের যুক্তি দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করছে তারা। এতে কাঁচামাল সংকটে দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিপর্যয় দেখা দিতে পারে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ ব্যবস্থায়ও। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বিলাসী পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি সীমিতকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে যে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণপত্র খুলতে পারে না। কিন্তু নিত্যপণ্য, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামালের এলসিও খুলছে না।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, উৎপাদন অব্যাহত রাখতে কাঁচামাল আমদানির জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে ঋণপত্র খোলা সচল রাখা জরুরি। ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে বিদেশি ঋণের ব্যবস্থা করা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে কাজে লাগানোর কৌশল বের করতে হবে।

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তাদের ‘এলসি লিমিট’ থাকার পরও ডলার সংকটের যুক্তি দেখিয়ে ব্যাংক এলসি দিচ্ছে না। অথচ যাদের লিমিট আছে, অন্তত সেসব প্রতিষ্ঠান এলসি পাওয়ার কথা। কাঁচামাল না পাওয়ায় কারখানা চালু রাখা যাচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার পাশাপাশি কাঁচামাল সংকট দেশের শিল্প খাতকে বড় ধরনের হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো এলসি খোলায় নিরুৎসাহিত করছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘খাদ্যদ্রব্য, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পে জড়িত সদস্যরা আমাদের চিঠি দিচ্ছেন। কাঁচামাল ও খাদ্যসামগ্রী আমদানির এলসিও খুলতে পারছে না। বেশি সংকটে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির আমদানিকারকরা। এ অবস্থায় এলসি খোলা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি।’

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, বিপুল বিনিয়োগের মাধ্যমে গত ৩০ বছরে তারা দেশীয় পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে উদ্যোক্তারা বাজার হারাতে পারেন। এতে বাজার আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের বৃহৎ স্টিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি হয়। এখন ব্যাংকগুলো কোনো এলসি দিচ্ছে না। এলসি না পেলে কাঁচামাল আসবে না, কাঁচামাল না পেলে কারখানা চলবে না। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবে। নিয়মিত যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি হয়, সে তুলনায় গত মাসে ১০ শতাংশেরও কম আমদানি করতে পেরেছি।’

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উদ্যোগ না নিলে সংকট সমাধান কঠিন মন্তব্য করে আবুল খায়ের গ্রুপের ডিজিএম আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে উঠে আসতে হলে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ অবস্থায় কেউ বিনিয়োগ করবে না।

ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিদেশি ঋণ আনার চেষ্টা করতে পারে। তবে সব ব্যাংকের সেই সক্ষমতা নেই। সরকার পলিসি তৈরি করে আনার পরামর্শ দিতে পারে। ব্যাংকগুলোকে সাপোর্ট দিয়ে একটি পলিসির মাধ্যমে সরকারকেই মোকাবিলা করতে হবে।’

ব্যবসায়ীদের এসব বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান রশিদ আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকট থাকায় এলসি দিতে পারছে না। সরকার চেষ্টা করছে রিজার্ভ বাড়ানোর। রেমিট্যান্স ও পোশাক খাতের রপ্তানি আয় কমে গেছে গেছে। ফলে সংকট বেড়েছে। বর্তমানে যে রিজার্ভ আছে, সেটা যাতে সংকটকালীন সময়ে খাদ্য আমদানি অব্যাহত রাখা যায়, সরকার সেভাবে পরিকল্পনা করেছে।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button