অর্থ ও বাণিজ্যপ্রবাসবাংলাদেশব্যাংকিংমধ্যপ্রাচ্য

চলতি অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রবাসী আয় প্রবাহ কমেছে

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশ থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসা কমেছে। তবে এ সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, মালয়েশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ থেকে আগের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সময়ে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই হাতে থাকা জমানো টাকা বৈধ চ্যানেলে দেশে পাঠানোর কারণে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছিল। করোনা মহামারির মধ্যে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো ছিল। ওই সময়ে সব ধরনের অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসছিল।

যাতায়াতের বিধিনিষেধ ও বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি কার্যত বন্ধ থাকার কারণে হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিল না। করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আবার চালু হয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেই ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটে। চলতি অর্থবছরেও একই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম থেকেই ডলারের দর আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের দর কমিয়ে দেওয়ায় প্রবাসীরা কম রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। রেমিট্যান্সের দর আরও বাড়ার অপেক্ষা করছেন তারা। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে বেশি টাকা পাওয়ার পাশাপাশি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার সুবিধাও পাচ্ছেন প্রবাসীরা। ফলে তারা সেদিকেই বেশি ঝুঁকছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ফরেন ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রেমিট্যান্সের ডলারের বিনিময় হার কিছুটা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও হুন্ডির মাধ্যমে ডলারে এখনো ১১২ টাকার মতো পাওয়া যায়।

সরকার রেমিট্যান্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, তারপরও অবৈধ পথে টাকা পাঠানো কমছে না। বর্তমানে ডলারের দাম খোলাবাজারে বেশি। ফলে বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে বিনিময় মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এটা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হুন্ডি বন্ধ না করতে পারলে এ প্রণোদনা কাজে আসবে না বলে জানান তারা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৩০ কোটি ৪১ লাখ ডলার। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশ।

কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কাতার থেকে কমেছে ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ওমান থেকে রেমিট্যান্স কম এসেছে ৪১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বাহরাইন থেকে কমেছে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৭৮ কোটি ৮১ লাখ ডলার। যা গত অর্থছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ, যুক্তরাজ্য থেকে বেড়েছে ১২ দশমিক ৫২

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button