অপরাধকুষ্টিয়াখুলনা

মাদক ও জুয়ার টাকার জন্য আপন ভাতিজার হাতে কুষ্টিয়ার স্কুলশিক্ষক খুন

গতকাল সোমবার রাতে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নওরোজ কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রোকসানা খানম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দীন।

গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের হাউজিং এলাকা থেকে নওরোজকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনায় গতকাল রাতে নিহত রোকসানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে নওরোজের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও দুই থেকে তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

মাদক ও জুয়ার টাকার জন্য কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রোকসানা খানমকে (৫২) তাঁর ভাতিজা নওরোজ কবির ওরফে নিশাত (১৯) খুন করেন বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

নিঃসন্তান রোকসানা খানম সাততলাবিশিষ্ট নিজবাড়ির দোতলায় একাই থাকতেন। বাকি ফ্ল্যাটগুলোয় ভাড়াটিয়ারা থাকেন। রোকসানা খানম কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। তাঁর স্বামী খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান যশোরের চৌগাছা উপজেলায় এলজিইডিতে কমিউনিটি অর্গানাইজার পদে কর্মরত।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের হাউজিং ডি ব্লকের সাততলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাট থেকে রোকসানার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত রোববার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাঁকে হত্যা করেছিলেন বলে ধারণা করছিল পুলিশ।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব ও পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করে।ডিবির ওসি নাসির উদ্দীন বলেন, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময় নওরোজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

নওরোজের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, রোকসানা নিঃসন্তান হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই নওরোজকে ছেলের মতো আদর করতেন। ২০১৩ সালের নওরোজের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রোকসানা নওরোজের দেখভাল করতেন। নওরোজ মাদকে আসক্ত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি অনলাইন জুয়ার সঙ্গেও জড়িত। এ জন্য তিনি প্রায়ই রোকসানার কাছ থেকে টাকা নিতেন। মাদক ও জুয়া খেলার টাকা জোগান দিতে সম্প্রতি নওরোজ তাঁর ফুফুর কিনে দেওয়া মোটরসাইকেলও বিক্রি করে দেন।রোকসানার বাড়ির চারতলায় নওরোজ তাঁর মা ও ভাই নিয়ে থাকতেন।

ঐ বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোকসানার বাড়িতে নওরোজ নিয়মিত আসা–যাওয়া করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে নওরোজকে আটক করা হয়।সম্প্রতি রোকসানা নওরোজকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং বকাঝকা করেন। এতে নওরোজ ক্ষিপ্ত হয়ে রোকসানাকে মারার পরিকল্পনা করেন।

গত শনিবার রাতে রোকসানা ছাদের ফুলবাগানে পানি দিতে যান। এ সময় রোকসানার ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে কৌশলে প্রবেশ করে লুকিয়ে থাকেন নওরোজ। রোকসানা ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে গেলে রাত দেড়টার দিকে রান্নাঘর থেকে শিল–পাটার শিল নিয়ে ঘুমন্ত রোকসানাকে মাথায় আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলে রোকসানার মৃত্যু হয়। গতকাল রাতে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শিলটি বাড়ির লিফটের পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে রোকসানার লাশ দাফন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল রাতে নিহত ব্যক্তির স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে নওরোজকে আদালতে নেওয়া হবে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button