অপরাধএক্সক্লুসিভজাতীয় পার্টিবাংলাদেশরাজধানীরাজনীতি

এরিকের ট্রাস্টের সম্পত্তি ভোগদখল করতে কাজী মামুনুর রশীদ মরিয়া

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে শাহাতা জারাব এরিক এরশাদের ভরণপোষণের জন্য ট্রাস্ট গঠন করেছিলেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার ওই ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের জন্য জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশীদ মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এরিক এরশাদ প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সোমবার (৭ নভেম্বর) গুলশান থানায় জিডি করেছেন। এছাড়া তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ প্রচলিত আইনে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।এরিকের জিডির তদন্ত করছেন গুলশান থানার এসআই মো. নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি এরিক এরশাদ ও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। এরিকের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এরিক এরশাদ অভিযোগ করেছেন, ট্রাস্টের সম্পত্তি ভোগদখল করতে কাজী মামুনুর রশীদ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মা বিদিশা এরশাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছেন। এটি পরে গণমাধ্যমে এরিকের বক্তব্য বলে প্রচারিত হয়েছে। এছাড়া বিদিশা এরশাদকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বারিধারার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে বের করে দিতে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

জিডিতে এরিক এরশাদ উল্লেখ করেছেন, গত ৬ নভেম্বর কাজী মামুনুর রশীদ ও কাজী রুবায়েত হাসান অতর্কিতে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় চলে আসে। সেখানে এক ঘণ্টা ধরে অবস্থান করে এরিক এরশাদ ও বিদিশা এরশাদকে উৎখাত করে প্রেসিডেন্ট পার্কের দখল নিতে হুমকি দেন।এরিক বলেন, ‘আমার বাসায় তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষতির উদ্দেশ্যে কোনো অবৈধ দ্রব্য রেখে যেতে পারে বলেও আমার সন্দেহ হয়।’

জিডিতে এরিক এরশাদ আরও উল্লেখ করেছেন, বাবা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ট্রাস্ট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে। ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলেন কাজী রুবায়েত হাসান।

গত অক্টোবর মাসে তাদের দুজনকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অপসারণ করে অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. তানভীর ইকবালকে ট্রাস্টের চেয়ারম্যান করা হয়। পরে অক্টোবরের শেষভাগে এরিক এরশাদ বিদিশা এরশাদকে নিয়ে ওমরা হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যেতে চাইলে মামুনুর রশীদ ও তার সঙ্গীরা তাদের বাধা দেন। ওই ঘটনায় এরিক পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন।

তার এই অভিযোগের আগে গত সোমবার কাজী মামুনুর রশীদের প্রেস উইং থেকে ‘এরিকের আকুতি— বিদিশার হাত থেকে আমাকে বাাঁচান’ শিরোনামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে।এতে বলা হয়, মা বিদিশা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ তুলে নিজেকে অবরুদ্ধ দশা থেকে উদ্ধার করতে সহায়তা চেয়েছেন এরশাদপুত্র এরিক।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশের সহযোগিতায় প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসা থেকে বিদিশাকে বের করে দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছেন এরশাদপুত্র। এই দাবির সপক্ষে মামুনুর রশীদের প্রেস উইং থেকে একটি ভিডিও বার্তাও সরবরাহ করা হয় সাংবাদিকদের।এতে কাজী মামুনুর রশীদের সঙ্গে এরিকের কথোপকথন শোনা যায়।

এরিকের মুখ দেখা না গেলেও এতে শোনা যায়, তিনি মামুনুর রশীদকে বলছেন, ‘মা বলেছেন, যে মেয়েটি আমার দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে, তার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক আছে। মা তাকে বের করে দিয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে তো আমার শারীরিক সম্পর্ক নেই। ‘

ওই কথোপকথনে মা বিদিশাকে ‘মীরজাফর’ ও  ‘খুনি এরশাদ শিকদারের’ সঙ্গে তুলনাও করেন এরিক। তিনি বলেন, ‘আমার বাঁচাটা জরুরি। আজকে তিনি (বিদিশা) যদি এই বাসায় থাকেন তাহলে আমি এই বাসায় থাকব না।’

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে এরিক এরশাদের দেখভালের জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার আগে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। এই ট্রাস্টে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা এফডিআর করা আছে। এ থেকে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়া ট্রাস্টের অধীনে গুলশানে দুই হাজার স্কয়ার বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এ থেকে মাসে ৪৫ হাজার টাকা আয় হয়।

বনানীতে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, সেখান থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। গুলশানে একটি দোকান রয়েছে, সেখান থেকে মাসে দুই লাখ টাকা আয় হয়। রংপুরে একটি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। এই কোল্ডস্টোরেজের সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৩০ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে। এ সব টাকা ট্রাস্টের মাধ্যমে এরিক সুবিধাভোগী।এরিক এরশাদের এই সম্পত্তি দখল করার জন্য কাজী মামুনুর রশীদ দীর্ঘদিন ধরে নানা অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এরিক।

এরিক বলেন, ‘ওই ভিডিও বা অডিও যা কিছু আপনাদের দেওয়া হয়েছে, তা আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে করা হয়েছে। মায়ের নামে আমাকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলানো হয়েছে। আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রচলিত আইনে মামুনুর রশীদদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কাজী মামুনুর রশীদকে এ বিষয়ে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই জিডি সত্যিই কি এরিক এরশাদ করেছে কি না তাতে আমার সন্দেহ আছে।’ ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের কথা উঠলে তিনি তা অস্বীকার করেন।এরিক বলেন, ‘আমাকে যেকোনো উপায়ে মা বিদিশা এরশাদ থেকে আলাদা করার জন্য তারা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। অনেক দিন থেকেই এই ষড়যন্ত্র চলছে। আমার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চলছে। এসব বন্ধে সত্যিই এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

কাজী মামুনুর রশীদ অভিযোগ করেছেন, বিদিশা এরশাদ তার পুনর্গঠিত জাতীয় পার্টি গঠনে এরশাদের নাম ব্যবহার করছেন বিনা অনুমতিতে।এর জবাবে বিদিশা এরশাদ বলেন, ‘রওশন ম্যাডাম যখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখনই তার সাথে আমার কথা হয়েছে। আমি তাকে চেয়ারম্যান পদে রেখে জাতীয় পার্টির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করি। তিনি আমাকে বাধা দেননি, তিনিই তো অনুমতি দিয়েছেন। তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কও চমৎকার। তিনি তো কোথাও লিখিতভাবে জানাননি যে আমি তার নাম কোথাও ব্যবহার করতে পারব না। এটা মামুনুর রশীদদের অপপ্রচার।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button