ফারদিন হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় এক ইউপি মেম্বার ও দুজন নারীর নাম আলোচনায়

বুয়েটছাত্র ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যাকাণ্ডের পর রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি, স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার ও দুজন নারীর নাম দফায় দফায় আলোচনায় আসছে। দুই নারী হলেন–মনু বেগম (৫০) ও ময়না বেগম (৪৫)। তারা দুজনই মাদক ব্যবসায়ী। স্থানীয় কায়েত ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রহমান বজলুর অনুসারী।

মনু বেগম ৮ নম্বর ব্লকের রাস্তার পাশের একটি বাসায় থাকেন। তাঁর স্বামীর নাম জুলহাস, তিনি ঢাকায় দৈনিক মজুরিতে বিভিন্ন কাজ করেন। তাঁর একমেয়ে ও প্রতিবন্ধী এক ছেলে রয়েছে। মেয়ের বস্তিতেই বিয়ে হয়েছে। তিনি সংসার করছেন।

মনুর বাড়িটি ইটের উঁচু সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ৮ নম্বর ব্লকের প্রধান সড়কের মাঝামাঝি ছোট সরু গলির ভেতরে তাঁর বাড়ি। তাঁর বাড়ির আকাশি রঙের লোহার গেটটি বন্ধ করে দিলে আর কিছু দেখা যায় না। গেটের ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি দিয়েও তেমন কিছু দেখা যায়নি। প্রতিবেশীরাও তাঁর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না। তবে তাঁর বাসায় মাদক ব্যবসা ও অপরিচিত মানুষের আড্ডার কথা জানিয়েছেন সবাই।

মনুর বাড়িতে ৪ নভেম্বর দিবাগত রাতে কোনো হট্টগোল হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তাঁর এক প্রতিবেশী অটোচালক বলেন, ‘মনুর বাড়িতে প্রতি রাতেই মানুষ আসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ছেলে মেয়েরা আসে, আড্ডা দেয়। সে রাজনীতি করে, এ জন্য লোকজন আসে। প্রতিদিন রাতেই তাঁর বাসায় শব্দ পাই, তবে সেগুলো কিসের শব্দ তা বলতে পারব না।’সিটি শাহীন ৮ নভেম্বর দুপুরে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার পর মনুও বাড়িতে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। বস্তির সবাই তার মাদক ব্যবসার কথা জানে।

অপর নারী ময়না বেগম বস্তির ৬ নম্বর ব্লকে থাকেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেই  ইয়াবা বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন। ময়না বেগম বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছায় মাদক ব্যবসা করি না। আমাকে জোর করে বজলু মেম্বার মাদক বিক্রি করায়। আমি তাঁর ভয়ে একবার পালিয়েছিলাম, সে ধরে এনে আমাকে মারধর করেছে। রায়হান, শাহীন আমাকে রাস্তায় ফেলে মেরেছে। মাদক ব্যবসা না করলে এলাকা ছেড়ে দিতে বলেছে।’

চনপাড়া বস্তিতে মাদক ব্যবসা, হত্যা, বাড়ি দখলে নেপথ্যে স্থানীয় কায়েত ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বজলুর রহমান বজলু মেম্বারের নাম আসছে বারবার। বজলু মেম্বার এক সময় বস্তিতে ছোট্ট একটি দোকানে চালের ব্যবসা করতেন। তাঁর তিন মেয়ে ও দুই মেয়ের জামাই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।

গত সোমবার চনপাড়ায় গিয়ে ময়নাকে পাওয়া গেলেও মনুর দেখা মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে মনুর বাড়িতে ফারদিনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তবে অনুসন্ধানে হত্যার বিষয়ে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না পাওয়া গেলেও ঘটনার দিন রাতে ওই বাড়িতে হট্টগোলের শব্দ পেয়েছে প্রতিবেশীরা।

সিটি শাহীন, রায়হান, শাওন, রাজা, সাব্বির এরা সবাই বজলুর অনুসারী। তাদের সবার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে। বস্তিতে জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন প্রত্যেকে। তাদের দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। তবে সবাই একাধিক বাড়ির মালিক। এসব বাড়ি ভাড়া দেন তারা।

বজলুর স্ত্রী শিরিন বস্তিতে ক্ষমতাবান। ঘটনার পর বজলু পলাতক। তবে তাঁর স্ত্রী বাসিন্দাদের মুখ না খুলতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। একটি এনজিওর অফিস দখল করে বস্তিতে নিজের অফিস বানিয়েছে বজলু মেম্বার। অনেকে সেটিকে টর্চার সেল বলেন।

Exit mobile version