খেলাফুটবলবিশ্ব সংবাদমধ্যপ্রাচ্য

সারা বিশ্বের মতো ফুটবল বিশ্বকাপের আনন্দোৎসবে সামিল বাংলাদেশ

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার অধিভুক্ত ২১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯২তম। নিজ দেশের এই অবস্থানে মোটেও কারও  ভ্রুক্ষেপ  নেই। বিশ্বের শক্তিশালী প্রিয় দল নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দেশের ফুটবলপ্রিয় মানুষ।

ফুটবলের সব পথ মিশে গেছে মরুর দেশ কাতারে। ক্ষণ গণনার দীর্ঘ পথও শেষ হচ্ছে এবার। বছর, মাস এবং সপ্তাহের পর আজ বেজে উঠবে বিশ্বকাপের বাঁশি। কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে মাঠের লড়াই। মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো বসছে ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর।

শত সহস্র, লাখো-কোটি মাইল দূরে থেকেও একই সুরে গলা মেলাচ্ছে বিশ্বের কোটি কোটি ফুটবল সমর্থক। সারা বিশ্বের মতো এমন আনন্দোৎসবে সামিল আমাদের ছোট্ট দেশটাও। নানাভাবে নানা আয়োজনে এদেশের জনগণও এই ফুটবল উৎসবে নিজেদের সামিল করছেন।

চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হতেই বিপণি বিতানে ভিড় জমে। ফুটবলে একটি দলের মনোনীত কয়েক রঙের জার্সি থাকে। সমর্থকরা পছন্দসই জার্সি কিনে নেন। এ সময় দরজির দোকানেও চলে হরদম ব্যস্ততা। কারণ, মনের মতো জার্সি না পেলে ছুটে যান দরজি দোকানে।

সেখানে নিজ নাম ও প্রিয় তারকার নম্বরসহ সাইজমতো বানিয়ে নেন জার্সি। ফুটবলপ্রেমীরা তাদের পছন্দের দেশের পতাকা হাটবাজার ও বাসা-বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাছের ডালেসহ বিভিন্ন জায়গায় উত্তোলন করেন। এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগ অংশই দু’টিমাত্র ফুটবল দলের সমর্থনে বিভক্ত। যার একপক্ষে অবস্থান আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। অপরদিকে হাঁকডাক দিচ্ছেন ব্রাজিলের সাপোর্টাররা।

২১ আসরে এশিয়া মাত্র দুইবারই বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে। প্রথমবার ২০০২ সালে এশিয়ার দুই দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল। এবার বসছে কাতারে। আফ্রিকায় এ আসর মঞ্চস্থ হয়েছে একবার। ২০১০ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি আয়োজনগুলোর সবটাই হয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায়।

ফিফার সদস্যরাষ্ট্রের সংখ্যা ২১১। সদস্যসংখ্যার দিক থেকে এটা জাতিসংঘের চাইতেই বেশি। ফিফা শক্তিশালী এক সংস্থা, যেখানে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নির্দিষ্ট কোনো সদস্যরাষ্ট্র যতই শক্তিশালী হোক না কেন  ফুটবলে ফিফার শক্তি তাদের চেয়েও বেশি। এখানে যতই রাজনৈতিক এবং বিবিধ বিরোধ থাকুক না কেন প্রতি দেশকে অংশ নিতে হয়, সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যকার রাজনৈতিক বিরোধ, ফকল্যান্ড নিয়ে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনার যতই বিরোধ থাকুক না কেন মাঠে ও মাঠের বাইরে এর উত্তাপ ছড়ালেও মাঠের প্রকাশে ফুটবলের নিয়মনীতির মধ্যেই থাকতে হয়। তাইতো নানা বিরোধিতা করার পরও নেদারল্যান্ডস, জার্মানরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই অংশ নিচ্ছে কাতারে।

কাতার ও ইকুয়েডরের ম্যাচ দিয়ে আজ শুরু হচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপের। ১৮ই ডিসেম্বর ফাইনালের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটবে ২২তম আসরের। এবার ৮টি গ্রুপে মোট ৩২টি দল অংশ নিবে লড়াইয়ের প্রথম পর্বে। এখান থেকে প্রতি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন আর রানার্সআপ মিলিয়ে ১৬ দল খেলবে দ্বিতীয় পর্বে। তারপরে কোয়ার্টার ফাইনালে ৮, সেমিফাইনালে ৪ এবং সবশেষে ফাইনাল খেলবে ২ দল।

এবারের কাতার বিশ্বকাপের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। আগের বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় দেখা গেছে সমর্থকরা অনেক আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়ে। মিডিয়াতেও কাউন্টডাউন শুরু হয়। এবার এতে কিছুটা ঘাটতি দেখা গেছে। এর অন্যতম কারণ সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট।

গত সপ্তাহ পর্যন্ত দেশের মানুষ ক্রিকেট নিয়ে মেতেছিল। ফলে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে বাংলাদেশে ‘হাইপ’ বা মাতামাতি দেরিতে শুরু হয়। দেশে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপও এর জন্য কিছুটা দায়ী। এছাড়াও বিশ্বকাপ ফুটবল সাধারণত বছরের মাঝামাঝি আয়োজন করা হয়। এবার তা হচ্ছে বছরের শেষভাগে। এই সময় বা শীতকালে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বেশি থাকে। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উত্তেজনা দেরিতে ছড়ানোর এটিও অন্যতম কারণ।

তবে দেরিতে হলেও চার বছর পর বিশ্বকাপের খেলাগুলো উপভোগ করার জন্য দেশের মানুষ প্রস্তুত। অনেকেই ইতিমধ্যে নিজ দলের জার্সি ও পতাকা সংগ্রহ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে অনেক ধরনের আলোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ।

এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে এশিয়ায় যতোটা উন্মাদনা তার বিপরীত অবস্থানে ইউরোপ। বিশ্বকাপ শুরু হলেও ইউরোপের গণমাধ্যমে সেভাবে নেই কাতার। কী কারণ এর? আয়োজক দেশ কাতারের ব্যর্থতা, ফিফার উদাসীনতা, নাকি অন্য কিছু? ফিফা ফুটবলের বৃহৎ এই আয়োজন নিয়ে কখনই উদাসীন হয় না, স্বাগতিক দেশ হিসেবে কাতারের উদাসীনতাও এখানে নেই।

তবে কারণ অন্য, এবং এটা স্বাগতিকদেরই। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ হিসেবে কাতার এমনিতেই রক্ষণশীল, কিন্তু বিশ্বকাপের মতো বহুজাতিক এই ফুটবল টুর্নামেন্টে যেখানে সারা বিশ্বের মানুষের চোখ থাকে সেখানে বিশ্বনাগরিকের চাওয়া মেটাতে পারছে না আয়োজকরা। এটা মূলত আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা।

সংকীর্ণতা, সংকীর্ণতা থেকে উদ্ভূত সীমাবদ্ধতা। এতে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেফ ব্লাটার। যার হাত ধরেই কাতার বিশ্বকাপ পেয়েছে, সেই তিনি সপ্তাহ খানেক আগে বলেছেন, কাতারে বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্তই ছিল ভুল।

কখনও বিশ্বকাপ খেলতে না পারা ‘ছোট দেশ’ কাতারের ম্যাড়ম্যাড়ে আয়োজন দেখে হতাশার মন্তব্য তার। অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু ও তাদের প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে কাতারের বিরুদ্ধে। ডেনমার্ক প্রতিবাদস্বরূপ জার্সিতে প্রতিবাদ আঁকতে চেয়েছিল, নেদারল্যান্ডস দল অভিবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার কথাও শোনা গেছে।

অংশগ্রহণকারী কয়েক দেশ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কাতারের মানবতাবিরোধী নানা আচরণের। তবে সকলের প্রত্যাশা বল মাঠে গড়ানোর ঠিক আগে অথবা বল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে দৃশ্যপট, মরুর বুকে শিল্পী ছুটে রেখে যাবে চিহ্নের পর চিহ্ন; শিল্পচিহ্ন। মাতবে বিশ্ব ফুটবলে, কাঁপবে বিশ্ব ফুটবলে; বিশ্বকাপ ফুটবলে!

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button