অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

স্বর্ণের প্রলেপ দেয়া কাপড়ে অবৈধভাবে সোনা আনেন তাঁরা

গত ১৪ অক্টোবর সকালে মোহাম্মদ জাকির হোসেন এবং মোহাম্মদ সোলায়মান এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে করে নামেন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।দুজনের বাড়ি কুমিল্লায়। বহু বছর ধরে তাঁরা সৌদি আরবে থাকছেন।

জাকির ও সোলায়মান—দুজনই বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল অতিক্রম করেন। তবে গতিবিধি সন্দেহজনক হলে কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম জাকিরের প্যান্টের পকেটে হাত দেন। তখন তাঁর কাছ থেকে স্বর্ণের ছয়টি চুড়ি উদ্ধার করা হয়। ওজন ছিল ১০০ গ্রাম। সোলায়মানের কাছ থেকেও চুড়ি উদ্ধার করা হয় ছয়টি।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাকির কিংবা সোলায়মান কাউকেই প্রথমে সন্দেহ করিনি। কারণ তাদের বেশভূষা দেখে মনেই হয়নি, তাঁরা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন। যাঁরা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন, তাঁরা আমাদের সন্দেহের তালিকায় থাকেন। অবশ্য জাকির ও সোলায়মানের প্যান্টের পকেট থেকে স্বর্ণের চুড়ি পাওয়ার পর সন্দেহ বেড়ে যায়। তখন দেহ তল্লাশির সিদ্ধান্ত হয়।’

তল্লাশি করেও প্রথমে কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তাঁদের দুজনের পড়নে থাকা শার্ট, প্যান্টের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মনে হয় গোয়েন্দাদের।ওজন কেন বেশি, সেই ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে জাকির ও সোলায়মান চুপ থাকেন। পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দুজনই স্বীকার করেন, জামা ও প্যান্টের কাপড়ের ভেতর স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া রয়েছে।

অনেক চেষ্টার পরও তাঁদের প্যান্ট ও জামা কেটে স্বর্ণ আলাদা করা যাচ্ছিল না। তখন খবর দেওয়া হয় একটি জুয়েলার্সের দুই স্বর্ণকারকে। তাঁরা বিমানবন্দরে আসেন; কিন্তু স্বর্ণের প্রলেপ বের করতে পারেননি। পরে জামা ও প্যান্ট তাঁতিবাজারে ওই স্বর্ণকারদের কারখানায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর পাঁচ ঘণ্টা ধরে সেগুলো পুড়িয়ে সেখান থেকে বিশেষ কায়দায় উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ। স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ১ কেজি ৩৪৫ গ্রাম; যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা।

জামা পুড়িয়ে স্বর্ণ উদ্ধার করা স্বর্ণকার মুসা খান বলেন, ‘স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত ব্যক্তিরা অভিনব সব টেকনিক (কৌশল) ব্যবহার করে থাকেন। তবে জাকির ও সোলায়মান যেভাবে স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত জামা ও প্যান্ট পরে স্বর্ণ এনেছেন, তা একেবারেই নতুন পদ্ধতি। জামা ও প্যান্ট  টানা পাঁচ ঘণ্টা আগুনে পোড়াতে হয়েছে। এরপর স্বর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জাকির ও সোলায়মান দুজনই রংমিস্ত্রি। তাঁদের জামা ও প্যান্ট পলেস্টারের কাপড়ের তৈরি। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাঁরা স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া জামা ও প্যান্ট পরে বিমানবন্দরে এসেছিলেন।’

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, কুমিল্লার জাকির ও সোলায়মানকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বিমানবন্দর থানা-পুলিশ। পরে দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জামার ভেতরে স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে স্বর্ণ পাচারের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। এই চক্রে যুক্ত অন্য সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button