পাবনায় প্রতিদিন তৈরি হতো হাজার লিটার ভেজাল দুধ, সরবরাহ ঢাকায়

শাহীন রহমান, পাবনা: আসল দুধ থেকে ‘ক্রিম সেপারেশন’ মেশিনের মাধ্যমে ক্রিম তুলে নেয়া হতো। এরপর পানির সাথে সয়াবিন তেল, কস্টিক সোডা ও চিনি দিয়ে অত্যন্ত আঠালো কৃত্রিম দুধ তৈরি করা হয়। পরে এসব নকল দুধ আসল দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ঘনত্ব বাড়িয়ে পরিমাণে কয়েকগুণ বাড়ানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার লিটার এই ভেজাল দুধ তৈরি করে পাঠানো হতো ঢাকায়।

এমনই ভেজাল দুধ তৈরি করার অপরাধে চক্রের সদস্য পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (১২ এপ্রিল) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদ হাসান খান এই অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় দেড় বস্তা কস্টিক সোডা জব্দ করা হলেও সেখানে থাকা ১৮ বস্তা চিনি জব্দ করা হয়নি।

অর্থদন্ডপ্রাপ্ত মাসুদ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দুগ্ধ সমবায় সমিতির ম্যানেজার। প্রাণ দুধ কোম্পানীর স্থানীয় এজেন্টের ল্যাব এসিসট্যান্ট।

মাসুদের অপর দুই সহযোগী একই গ্রামের বাসিন্দা সিদ্দিক ও শামীম। অভিযুক্তরা আগে বিভিন্ন দুগ্ধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। উল্লেখ্য, এর আগেও নকল দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির অপরাধে এই উপজেলায় একাধিক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমান আদালতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, ভবানীপুর গ্রামে মাসুদের বাড়িতে অপর দুই সহযোগী সিদ্দীক ও শামীম মিলে ভেজাল দুধ তৈরী ও বিক্রি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার সকালে স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মী ভবানীপুর গ্রামে মাসুদের বাড়িতে গিয়ে ভেজাল দুধ তৈরিতে সরঞ্জামাদির সন্ধান পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেন।

কিছুক্ষণ পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে শুধুমাত্র কস্টিক সোডা জব্দ করে মাসুদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় মাসুদের সহযোগী শামীম ও সিদ্দিক পালিয়ে যান। দেড় বস্তা কস্টিক সোডা জব্দ করা হয়। তবে ঘটনাস্থলে পাওয়া ১৮ বস্তা চিনি জব্দ না করায় প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে নকল দুধ বাজারজাত করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের শাস্তি মাত্র ৫০ হাজার টাকা। যা তাদের একদিনের আয়ের সমানও নয়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রুমানা আক্তার বলেন, কস্টিক সোডা মানবদেহে জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একদিকে দুধের মূল উপকারী উপাদান সরিয়ে ফেলে ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে মারাত্মক অপরাধ করেছে তারা। শাস্তি হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া যেতে পারতো। তবে প্রাথমিকভাবে তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে।

এ ব্যাপার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, প্রাথমিকভাবে এই জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হবে। পরে প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মামলা দেওয়া হবে। চিনি জব্দ না করার বিষয়ে তিনি বলেন, মানবিক কারণে কারণে এটা করা হয়নি।

Exit mobile version