রোদে জ্বলছে গোটা দেশ: এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে কী করবেন

লাইফস্টাইল ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা। রীতিমতো জ্বলছে গোটা দেশ। এমন অসহনীয় গরমে দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে কিংবা খোলা আকাশের নিচে কাজ করলে ঝুঁকি থাকে হিট স্ট্রোকের। এ থেকে হতে পারে মৃত্যুও।

গা ঝলসানো গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়গুলো জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিনের মেডিসিন পালমোনারি ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের অধ্যাপক রুমি আহমেদ খান।

কানাডাভিত্তিক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশের অনুরোধে বাংলাদেশ সময় রোববার ভোররাত পৌনে ৫টায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেয়া পোস্টে এসব করণীয় জানান রুমি।

ঢাকার তাপমাত্রা এখন প্রতিদিনই চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠছে! শুনলাম এই সপ্তাহে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) করার সম্ভাবনা রয়েছে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জেলায়। এই তাপমাত্রায় দিনের পর দিন বাইরে থাকলে বা কাজ করলে হিট এক্সহশন বা হিট স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। হিট স্ট্রোক একটা মেডিক্যাল ইমার্জেন্সি এবং অতি দ্রুত স্পেশালাইজড মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটিতে না নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি।

এই গরমে বেশিক্ষণ বাইরে থাকার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আমাদের শরীর খুব তাপমাত্রা সেনসিটিভ। তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে আমাদের বডি বিভিন্নভাবে তাপমাত্রা কমাতে কাজ শুরু করে দেয়। প্রধানতম পদ্ধতি হচ্ছে ঘাম তৈরি করে। যখন আমাদের বডির সারফেস থেকে ঘাম ইভাপোরেট হয়ে শুকায়, তা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনে, তবে এই ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমানোর একটা লিমিটেশন আছে। হিউমিডিটি যদি ৭৫ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে এই পদ্ধতি খুব একটা কাজ করে না। আমি চেক করলাম ঢাকার আজ (শনিবার) হিউমিডিটি হচ্ছে ৭৮ শতাংশ।

অতিরিক্ত ঘাম থেকে যেসব সমস্যা

আমরা যদি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করি, অতিরিক্ত গরমের কারণে কী কী সমস্যাগুলো হতে পারে, তা হবে

প্রথম ধাপে যা হয়, তা হচ্ছে হিট ক্রাম্প। অতিরিক্ত ঘামের কারণে লবন ও পানির অভাব হয় এবং এর প্রভাবে মাসল (বিশেষ করে পায়ের) মাসল ক্র্যাম্প (কামড়ানো) শুরু করে। এরপর হচ্ছে এক্সহশন। হিট এক্সহশন এক দফায় হিট এক্সপোজারের কারণে না হয়ে অনেক দিনের কিউমিলিভ ইফেক্টে হতেও পারে। যেমন: আপনি পরপর তিন- চার দিন দুই-তিন ঘণ্টা করে বাইরে গরমে থাকলেন। তারপর পাঁচ দিনের দিন আপনার হিট এক্সহশনের সিম্পটম শুরু হলো। যারা বয়স্ক, যারা অতিরিক্ত শুকনা বা ওবিজ (স্থূল), শিশু, প্রেগন্যান্ট, যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, এরাই বেশি ভালনারেবল।

লক্ষণ

হিট এক্সহশনের লক্ষণ হচ্ছে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, দুর্বলতা, মাথা ধরা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব আর ফেইন্ট (মূর্ছা যাওয়া) ভাব হওয়া। থার্মোমিটার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে পারেন হিট এক্সহশন কনফার্ম করার জন্য। হিট এক্সহশনের একপর্যায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস ও হার্ট রেট দ্রুত হতে শুরু করবে।

প্রতিকার

কীভাবে চিকিৎসা করবেন হিট এক্সহশন? প্রথম কাজ ছায়ায় নিয়ে আসুন রোগীকে। রিহাইড্রেশন (পর্যাপ্ত তরল পান) করুন। ওর স্যালাইন সবচেয়ে ভালো। শুধু ঠান্ডা পানি হয়েও চলবে প্রথমে। আশপাশে পুকুর থাকলে গলা পর্যন্ত পুকুরের পানিতে নামিয়ে দিন। পুকুর না থাকলে বাথ টাবে শুইয়ে দিন এবং পানির মধ্যে কিছু বরফ ঢেলে দিন। তাও না থাকলে ঠান্ডা পানিতে গোসল করিয়ে দিন। তারপর টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন। টেম্পারেচার না নামলে আবার ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে দিন এবং ম্যাক্স স্পিড টেবিল ফ্যান দিয়ে শরীর শুকিয়ে দিন।

মনে রাখতে হবে ঠান্ডা পানির রিহাইড্রেশন খুব জরুরি, তবে এটাও মনে রাখতে হবে শুধু পানি অতিরিক্ত খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য ওরাল স্যালাইন উপকারী।

যদি হিট এক্সহশনের ঠিকমতো চিকিৎসা করা না যায়, অথবা ডায়াগনসিস করা না যায়, হিট স্ট্রোক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।

যদি দেখেন স্কিন শুকনা লাল হয়ে গিয়েছে, ঘাম হচ্ছে না, পালস হাই হয়ে গিয়েছে, রোগী উল্টাপাল্টা কথা বলছে অথবা কোনো কথা বলছে না অথবা রোগী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে, হিট স্ট্রোক সন্দেহ করুন। এর পরের ধাপে একের পর এক অর্গান ফেইল করা শুরু করবে। প্রথমে ব্রেইনের নিউরনগুলো ড্যামেজ হবে। এরপর আমাদের লিভার ও রক্তনালির সেলগুলোর ড্যামেজ শুরু হবে। ইভেনচুয়ালি সব অর্গানই ফেইল করবে। রোগী এই অবস্থায় পৌঁছে গেলে ওপরের স্টেপগুলো তো নিতে হবেই, যত দ্রুত সম্ভব আইসিইউ আছে এমন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, তবে রোগীকে ঢাকা পাঠানোর নামে আরও ১০ ঘণ্টা গরমের মধ্যে ঢাকার পথে ট্রাফিক জ্যামে ফেলে রাখার কোনো মানে হয় না।

আপনার স্থানীয় ওষুধের দোকানের স্বত্বাধিকারীকে বলুন কিছু স্যালাইনের ব্যাগ ফ্রিজে রেখে দিতে (ডিপ ফ্রিজ নয়)। রোগীকে ওই ঠান্ডা স্যালাইন ইন্টারভিনাস দিতে পারলেও অনেক কাজ হবে, তবে মূল লক্ষ্যটা হবে কেউই যাতে হিট এক্সহশন পর্যায়ে না যায়। ঘরের বাইরে যেতে হলে সাথে বড় ঠান্ডা পানির ফ্লাস্ক বা বোতল রাখুন এবং কিছু পরপর পানি খেয়ে মুখ ভিজিয়ে রাখুন।

শিশুরা যারা বাইরে স্কুলে যায়, মাঠে দৌড়াদৌড়ি করে, তাদেরকে স্কুলে না পাঠানোই ভালো। স্কুলে তো আর এসি নেই। বেশি রিস্কি গরম পড়লে স্কুল বন্ধ করে দেয়াই ভালো। আমি শিউর না এখন দেশের স্কুলগুলো রোজার জন্য বন্ধ কি না।

যত হালকা-পাতলা খোলামেলা পোশাক পরা যায়, তত ভালো, তবে আমাদের ধর্মীয় রক্ষণশীল সমাজে মহিলাদের জন্য এই অ্যাডভাইসটা তো প্র্যাকটিক্যাল না। উনাদের এই সময়গুলোতে ঘরের বাইরে বের না হওয়াটাই সেফ। আরেকটা কথা, মহিলারা কিন্তু ঘরের ভেতরে রান্না ঘরে একটা রিস্কি এনভায়রনমেন্ট আছেন। গরমের দিন রান্নাঘরের তাপমাত্রা অন্যান্য রুমের চেয়ে অনেক বেশি। এই ব্যাপারটাও অনুগ্রহ করে মাথায় রাখবেন।

Exit mobile version