ঈদের আগেই গরুর মাংস ৮০০, মুরগির কেজি ২৬০ টাকা

জুমবাংলা ডেস্ক : ঈদ-উল-ফিতর শ‌নিবার অথবা রবিবার হ‌তে পা‌রে। এখনও দু‌দিন বা‌কি। চাঁদ উঠার অপেক্ষায় পু‌রো জা‌তি। কিন্তু থে‌মে নেই বাজা‌রের ব্যবসায়ীরা। আজ থে‌কেই তারা মাংসের দাম বাড়িয়ে দি‌য়েছে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) যে গরুর মাংসের কে‌জি ছিল ৭৫০ টাকা, আজ সেটা বি‌ক্রি হ‌চ্ছে ৫০ বা‌ড়ি‌য়ে ৮০০ টাকা। লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির দাম বে‌ড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পাকিস্তানি মুরগির (কক) কেজিতে দাম বে‌ড়েছে ৩০ টাকা।

ঈদকে কেন্দ্র করে সকল প‌ণ্যের স‌ঙ্গে পাল্লা দি‌য়ে, সি‌ন্ডি‌কেট ক‌রে মাংস ও মুর‌গির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ ক‌রে‌ছেন ক্রেতারা। ‌বিষয়টি অস্বীকার করে‌নি হা‌তিরপু‌লের মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দু‌দিন পর ঈদ। আর ঈদে সবাই মাংস, মুর‌গি, পোলাও- এসব খায়। এসময় মাংস ও মুর‌গির চা‌হিদা বাড়ার কার‌ণে বেশি দামে গরু, মুর‌গি দুটোই কিনে আনতে হয়েছে। তাই বাধ্য হ‌য়ে বেশি দামে বিক্রি করছি।

বৃহস্প‌তিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর হা‌তিরপুল ও নিউ মা‌র্কেট ঘু‌রে এবং ব্যবসায়ী‌দের স‌ঙ্গে কথা ব‌লে এসব তথ্য জানা গে‌ছে। ব্যবসায়ীরা স্বীকার কর‌ছেন, সব ঝা‌মেলা ও ঝড় যাচ্ছে ক্রেতাদের ওপর দিয়ে।

বৃহস্পতিবার গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। অথচ বুধবারও কেজিপ্রতি দাম ছিল ৭৫০ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে বে‌ড়ে‌ছে ৫০ টাকা। দাম বাড়লেও মাংস ও মুর‌গির দোকা‌নে ক্রেতাদের উপস্থিতি লক্ষ্য‌ করা গে‌ছে অনেক বেশি।

হা‌তিরপুল বাজারে আসা নাজমা সুলতানা নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে দাম বাড়তে পারে ম‌নে ক‌রে মাংস কিনতে এসেছি। এসে দেখি আজ‌কেই ৫০ টাকা দাম বেড়ে গেছে। ৩ কেজি মাংস কিনেছি ৮০০ টাকা ক‌রে। কাল‌কেও ছিল ৭৫০ টাকা কেজি। এটা তো রীতিমতো ব্যবসার নামে ডাকাতি।

নিউ মা‌র্কে‌টের এক ব্যবসায়ী আমিনুল বলেন, কলিজা-হাড়সহ গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছি ৮০০ টাকায়। যদি কেউ কলিজা না নিতে চায় তবে শুধু মাংস ও হাড় নিতে পারবেন ৮০০ টাকা কেজিতে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, গতকালও মাংস ৭৫০ টাকায় কেজি বিক্রি করেছি, আজকে ৮০০। ঈদ ঘনিয়ে আসায় গরুপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এ দাম বা তার চেয়ে বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে হবে ব‌লেও জানান এই ব্যবসায়ী।

এদিকে ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজিতে। অথচ বুধবারও বিক্রি হয়েছে ২১০-২২০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগির দেখাদেখি কেজিপ্রতি লেয়ার মুরগির দামও বেড়েছে ৩০ টাকা। বুধবার ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার বৃহস্পতিবার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজিতে। আর সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজিতে।

গরুর মাংস কিনতে এসে বে‌শি দা‌মের কার‌ণে না কি‌নে ২টা ব্রয়লার মুরগি কিনেছেন কাঁটাবন এলাকার বা‌সিন্দা আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, গরুর মাংস কিনতে এসেছিলাম। ৮০০ টাকা দাম দে‌খে না কিনে মুরগি কি‌নে নিয়ে যাচ্ছি। য‌দিও আজ গরুর মাংসের চেয়ে মুরগির দাম কম বা‌ড়ে‌নি।

‌নিউ মা‌র্কে‌টের মুর‌গি ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদকে সামনে রেখেই ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী নিরব বলেন, বুধবার ব্রয়লারের কেজি কিনেছি ১১৭ টাকায়। আজ কিনেছি ১৪২ টাকা কেজিতে। এবার বলুন, কীভাবে কম দা‌মে বিক্রি করব? যাতায়াত খরচ ও দোকান ভাড়া মিলে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ২৬০ টাকা কেজিতে। তাছাড়া গর‌মে মুর‌গি মারাও যা‌চ্ছে, সেটার হিসাবও তো ধর‌তে হ‌বে।

আজ‌কের মুর‌গি বাজারে পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা কেজিতে। বুধবার যা বিক্রি হয়েছে ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে। অর্থাৎ পাকিস্তানি মুরগির ক্ষে‌ত্রেও দাম বে‌ড়ে‌ছে কে‌জি‌তে ২০ থেকে ৩০ টাকা।

এসব বাজা‌রে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে। যা গতকালও বিক্রি হয়েছে ৫২৫ টাকা দরে। এছাড়াও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজিতে। ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা কেজিতে।

হা‌তিরপুল বাজারের ব্যবসায়ী শ‌রিফুল হাসান বলেন, ঈদে সবার বাসায় মাংস-মুর‌গি রান্না হয়। আর সেটা‌কে মাথায় রে‌খে বড় বড় ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়িয়েছে। আমারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাই আমরা বেশি দামে কিনে বে‌শিতে সেগুলো বিক্রি করছি। খুব বেশি লাভ হচ্ছে না আমাদের। উপরন্তু কাস্টমা‌রের কথা‌ শুন‌তে হ‌চ্ছে। ত‌বে, দাম বাড়ার পর আজও বিক্রি ভা‌লোই হচ্ছে। মানুষ যদি মাংস কেনা কমিয়ে দিতো তাহলে এমনিতেই দাম কমে যেত।

সরকারি বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিবিসি) তথ্যমতে, বুধবার রাজধানীতে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা। একইদিন খাসির মাংস বিক্রি হয় কেজিতে ১১০০ টাকা কেজিতে। দেশি মুরগি বিক্রি হয় ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজিতে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২১৫ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৯০ থেকে ২১০ টাকা কেজি।

Exit mobile version