অর্জুনের সমালোচকদের ধুয়ে দিলেন ব্রেট লি

স্পোর্টস ডেস্ক : বোলিং অ্যাকশন খুব মসৃণ নয়। গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার স্পর্শ করে কদাচিৎ। বোলিংয়ে ধার খুব বেশি নেই। অর্জুন টেন্ডুলকারের বোলিংয়ে অস্ত্র যতটা থাকুক, তার সমালোচকদের হাতে অস্ত্র কম নেই। সেই সমালোচকদেরই এবার পাল্টা আক্রমণ করলেন ব্রেট লি। অর্জুনের প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ। শচিন টেন্ডুলকারের ছেলের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গতি তারকার পরামর্শ, বাবার মতোই কান দেওয়া যাবে না সমালোচকদের কথায়।

বল হাতে এখনও বলার মতো তেমন কিছু করেননি অর্জুন। তবে শচিনের ছেলে হিসেবেই এখনও পর্যন্ত এবারের আসরের আলোচিত চরিত্র তিনি। এখনও পর্যন্ত ৩ ম্যাচ খেলে তার উইকেট ২টি। নতুন বলে সুইং করানোর সামর্থ্য তিনি এর মধ্যে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ডেথ ওভারের দক্ষতাও কিছুটা মেলে ধরেছেন। তবে তৃতীয় ম্যাচে তুমুল মারও হজম করেছেন।

বিখ্যাত বাবার সন্তান হওয়ার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি পেতে হয় কাঁটার আঘাতও। অর্জুনও উপলব্ধি করতে পারছেন। তার প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েই কাটাছেঁড়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তার গতি নিয়ে। বাঁহাতি এই পেসারের বোলিংয়ের গতি ১২৫ থেকে ১৩০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে বেশির ভাগ সময়।

তবে অর্জুনের এই গতি আরও বাড়বে বলেই বিশ্বাস ব্রেট লির। কদিন আগে সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক রশিদ লতিফ বলেছিলেন, অ্যাকশন কিছুটা শুধরে নিলে অর্জুনের গতি ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে। জিও সিনোমায় আলোচনায় ব্রেট লি সেই সীমানা বাড়িয়ে দিলেন আরও।

তবে একসময় গতির ঝড় তোলা এই ফাস্ট বোলার এটিও বললেন যে, গতিই শেষ কথা নয়। উদাহরণ দিলেন তিনি আইপিএলে ১২১ উইকেট নেওয়া পেসার সন্দিপ শর্মাকে।

“লোকে তো প্রায় সবকিছু নিয়েই সমালোচনা করে। সন্দিপ শর্মার দিকে তাকান, সে তো বছরের পর বছর ধরে ১২০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে আসছে। অর্জুন অন্তত এর চেয়ে জোরে বোলিং করে। তার বয়স মোটে ২৩। তার পুরো ক্যারিয়ার সামনে পড়ে আছে।”

“অর্জনের দারুণ কিছু স্কিল আছে। দলীয় আবহে অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারলেই সে ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করতে পারবে। এই পাদপ্রদীপের আলো ও গ্যালারি ভরা দর্শকের সামনে মানিয়ে নিতে পারলেই তার গতি বাড়বে। গতি নিয়ে আমি কোনো সমস্যাই দেখি না। আমি জানি সে কতটা দ্রুত বোলিং করতে পারে।”

শচিন টেন্ডুলকার তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে খারাপ সময়ে যেভাবে সমালোচনার মধ্যেও নিজের কাজ করে গেছেন, ছেলেকেও সেই পথ অনুসরণের পরামর্শ দিলেন লি।
“তার জন্য আমার পরামর্শ হলো, সমালোচনাকে পাত্তা দেওয়া যাবে না। তার বাবাকেও যেমন এসবের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, অনেক সময়ই কম রানে আউট হয়েছে… কিন্তু নিজের ওপর আস্থা রেখেছে। এটিই করতে হবে।”

“প্রতিভার কমতি তার নেই, সব গুণই তার আছে। আমার পরামর্শ হলো, সে যা করছে, তা ভালোভাবে করতে থাকুক এবং যারা তার দিকে আঙুল তুলছে, তাদের দিকে তাকানোরও প্রয়োজন নেই। কারণ মনে রাখতে হবে, সামাজিক মাধ্যমে সমালোচকদের মধ্যে বেশির ভাগই তাদের জীবনে একটি বলও করেনি। তারা স্রেফ কি-বোর্ড যোদ্ধা।”

অর্জনের প্রথম ম্যাচ ছিল ভালো-মন্দের মিশেল। দ্বিতীয় ম্যাচটিতে ভালোর ভাগই ছিল বেশি। তবে তৃতীয় ম্যাচে ৩ ওভারে রান দেন ৪৮। এর মধ্যে এক ওভারেই ৪টি চার ও ২ ছক্কায় হজম করেন ৩১ রান।

তবে লির মতে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনটা হতেই পারে। তিনি বরং অর্জুনের প্রতিভা ও পারফরম্যান্সে সবদিক থেকেই মুগ্ধ।

“আগের দিন যখন তাকে ডেথ ওভারের দায়িত্ব দেওয়া হলো, সে দলকে জিতিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যেটাই হোক, তার জন্য এটা ছিল দারুণ অভিজ্ঞতা যে তাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই শিখতে হয়। পরের ম্যাচে সে কিছু রান দিয়েছে, এতেও সমস্যা নেই। টি-টোয়েন্টিতে এটা হয়। আমার ক্ষেত্রেও অনেক হয়েছে। এই সংস্করণে বোলারদের এমন দিন আসেই।”

“আমি অর্জুন টেন্ডুলকারকে নিয়ে মুগ্ধ। সে সব জায়গায় বোলিং করতে পারে। নতুন বলে তার বোলিং দুর্দান্ত, সে বল সুইং করাচ্ছে। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুইং করাচ্ছে সে। মাঝের ওভারগুলোর জন্যও সে উপযুক্ত এবং অভিজ্ঞতা বাড়লে ডেথ ওভারেও আরও উপভোগ করবে। তার জন্য আমার সবটুকু প্রশংসাই থাকছে।”

Exit mobile version