অপরাধআইনশৃঙ্খলা বাহিনীএক্সক্লুসিভচট্টগ্রামবাংলাদেশ

পুলিশ সদস্য নিখিলের ছোড়া এসিডে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন দুই ভাই

অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন চাচাতো দুই ভাই। পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়া তাঁদের ওপর এই অ্যাসিড ছুড়ে মারেন বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ঘটনার ২৬ দিন পরও অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া গ্রেপ্তার হননি।

মামলার পর নিখিল বড়ুয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি একই ইউনিয়নের হাজারীকুল গ্রামে। তিনি এখন বিভিন্নভাবে হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

গত ২৫ অক্টোবর রাতে কক্সবাজারের রামুর চৌমুহনী স্টেশনে এ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে দগ্ধ দুজন হলেন টিপু বড়ুয়া (৩৪) ও দীপক বড়ুয়া (৩২)। তাঁরা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। তাঁদের বাড়ি রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামে। এ ঘটনায় গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ সদস্য নিখিল বড়ুয়াকে প্রধান আসামি করে রামু থানায় অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন আহত টিপুর মা প্রকৃতা বড়ুয়া (৪৯)। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়।

বর্তমানে টিপু বড়ুয়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বার্ন ইউনিটের ৫ নম্বর শয্যায় এবং দীপক বড়ুয়া ৬ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন। দুজনই সেখানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।মামলার বাদী প্রকৃতা বড়ুয়া বলেন, নিখিল বড়ুয়া প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাতে পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৫ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে টিপু বড়ুয়া ও দীপক বড়ুয়া নিজের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। দুজন রামু চৌমুহনীর ভিক্টর প্লাজার বিপরীতে জাহেদ হোসেনের মার্কেটের সামনে রাস্তায় পৌঁছালে নিখিল বড়ুয়াসহ অজ্ঞাতনামা তিন-চারজন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে এসে দুজনকে অ্যাসিড ছুড়ে মেরে পালিয়ে যান।

অ্যাসিডে টিপু ও দীপকের মুখ, চোখের গোড়া, গলা, হাত, পিঠ ও গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত শরীরের বিভিন্ন অংশ মারাত্মক জখম হয়। আহত ব্যক্তিদের প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে নিখিল অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, এ মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৩ নভেম্বর রিপন বড়ুয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাঁকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামু থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আমীর হোসেন।

ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া পলাতক বলে দাবি করেছেন রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন। তিনি বলেন, সাত দিন আগে নিখিল বড়ুয়াকে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিখিল বড়ুয়ার গ্রেপ্তারের দাবিতে রামুতে ২৯ অক্টোবর থেকে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জিৎময় বড়ুয়া।

ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ভুট্টো বলেন, অতীত ইতিহাসে রামুতে অ্যাসিড–সন্ত্রাসের নজির নেই। আইনের লোক হয়ে নিখিল বড়ুয়া অ্যাসিড ছুড়ে দুজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জীবন বিপন্ন করে দিলেন। অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরি।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button