মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মা ও দুই সন্তান হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে এ হত্যা মামলার একমাত্র আসামি তাঁত শ্রমিক আইয়ুব আলী ওরফে সাগরকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ট্রিপল মার্ডারের আদ্যপান্ত ঘটনার বিবরণ দেন পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল। গ্রেফতার আইয়ুব আলী ওরফে সাগর উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাঁতী গ্রামের মৃত মোকছেদ মোল্লার ছেলে।
শনিবার বিকেলে বেলকুচি উপজেলার মধুপুর গ্রামের সুলতান আলীর স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৪০) এবং দুই পুত্র জিহাদ (১০) ও মাহিম (৪) এর মরদেহ তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ৩দিন আগে তাদের হত্যা করার কারণে লাশগুলো ফুলে দুর্গন্ধ বের হয়।
২রা অক্টোবর সকালে নিহত রওশন আরার ভাই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে বেলকুচি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতকে গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। মৃতদেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ট্রিপল মার্ডারের মূল আসামি নিহত রওশন আরার সৎ মামা আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা।
সাগরকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। সাগর পেশায় একজন তাঁত শ্রমিক। তার পেশার আয় দিয়ে সংসার নির্বাহ না হওয়ায় বিভিন্ন সময় ব্র্যাক, সাউথ বাংলা, মানবমুক্তি ও তাঁতী সমিতির এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নেয়। সংসারের খরচ মেটানো এবং এনজিওর কিস্তি এক সাথে চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। খরচ ঋণগ্রস্ততার কারনে সে চরম হতাশাগ্রস্ত ছিলো। নিহত রওশন আরা সাগরের সৎ ভাগনি। প্রায়ই সে তার ভাগনির বাসায় যাতায়াত করতো।
গত ২৬শে সেপ্টেম্বর সাগর রওশন আরার বাড়িতে যায় এবং ভাগনির কাছে টাকা হাওলাত চায়। কিন্তু কোন টাকা পায় না। পরে ঐদিন বাড়ীতে ফিরে কিস্তির টাকা যোগাড় করতে না পারায় তার ভাগনির বাসায় চুরি করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই জন্য ২৮শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাগর আবার তার ভাগনি রওশন আরার বাড়িতে যায়। রাতে সবার সঙ্গে খাবার খেয়ে একই ঘরে ঘুমিয়ে পরে। মাঝরাতে ভাগনির ঘরে চুরি করার উদ্দেশ্যে রওশন আরার আঁচল থেকে সিন্ধুকের চাবি খুলে নেয় এবং সিন্ধুক খুলে টাকা ও গহনা খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে রওশন আরা জেগে উঠলে সাগর পাশে থাকা পাথরের শিল দিয়ে রওশন আরার বুকে আঘাত করে গলা চিপে হত্যা নিশ্চিত করে।
এরপর সে ধারাবাহিকভাবে আবার সিন্ধুকে টাকা গহনা খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে রওশন আরার ছোট ছেলে মাহিন জেগে কান্না শুরু করলে সাগর তাকেও গলা চিপে হত্যা করে। সে আবার সিন্ধুকের কাছে যায়। এসময় বড় ছেলে জিহাদ জেগে উঠলে তাকেও গলা চিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। কিন্তু রওশন আরার ঘরে থাকা সিন্ধুকে কোন টাকা বা গহনা আর খুজে পায়নি সাগর। পরে ফজরের আযান হলে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে শিকলে তালা দিয়ে চলে যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামি সাগর নিজে সম্পৃক্ততাসহ ঘটনার বিষেয়ে লোমহর্ষক বর্ণনা ভিডিও আকারে প্রদর্শন করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাগরকে আদালতে প্রেরণ করা হবে বলে পুলিশ সুপার জানান।
জানা যায়, নিহতের স্বামী বহু বিবাহে জড়িত, কয়েকদিন আগে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর মামলায় জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন। নিহত রওশন আরার দুই ছেলেকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। তার স্বামী আরেক স্ত্রীর সঙ্গে অন্যত্র বসবাস করেন।