ইউরোপবিশ্ব সংবাদ

রাশিয়া ফেডারেশনে নতুন যুক্ত হওয়া চারটি অঞ্চলকে সব উপায়ে রক্ষা করবে মস্কো

গণভোটের পর ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়া ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, এই অঞ্চলগুলো সব রকম উপায়ে রক্ষা করবে মস্কো। একই সঙ্গে সেখানকার বাসিন্দাদের রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। খবর বিবিসি ও আল–জাজিরার।

রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে যুক্ত করা ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো হলো খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক। অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ‘নতুন অংশ’ উল্লেখ করে ভাষণে পুতিন বলেন, অঞ্চলগুলো রক্ষায় যা যা করার দরকার, করা হবে। এসব অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কখনো ছেড়ে দেওয়া হবে না।

ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি টানতে দেশটিকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের অধিবাসীদের রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার ‘পূর্ণ অধিকার রয়েছে’। তাঁদের রাশিয়ার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

আজ শুক্রবার ক্রেমলিনে দেওয়া এক ভাষণে এসব কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পরে চার অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে প্রয়োজনীয় নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন অঞ্চলগুলোয় মস্কোর নিয়োগ দেওয়া নেতারা।

পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক ‘কিয়েভের শাসকদের অমানবিক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে আসছে’। ২০১৪ সালে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই দুই অঞ্চলের বড় অংশ দখলে নেন। সেখানকার রুশভাষীদের ইউক্রেন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বলে এর আগেও বহুবার দাবি করেছেন পুতিন।

শুক্রবারের ভাষণে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন পুতিন। তাদের ‘শয়তান’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দেশগুলো ‘ঐতিহ্যগত’ ও ‘ধর্মীয়’ মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে গেছে। তারা ‘নৈতিকতার রীতিনীতি’ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।ভাষণের এক পর্যায়ে ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান পুতিন। এ সময় তিনি বলেন, নিহত এই সেনারা রাশিয়ার নায়ক। স্বদেশের জন্য তাঁরা নিজেদের জীবন দিয়েছেন।

রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে ঘোষণার আগে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলগুলোতে গণভোটের আয়োজন করে মস্কো। গত শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলে এ ভোট। ভোটে চার অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন বলে রুশ গণমাধ্যমগুলোর খবরে উঠে আসে। যদিও ইউক্রেন ও দেশটির পশ্চিমা মিত্ররা প্রথম থেকে এ ভোটকে ‘ভাঁওতাবাজি’ আখ্যা দিয়ে আসছে।

এদিকে স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে যুক্ত করার ঘোষণা মেনে নেয়নি কিয়েভ। এর বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, এই সংযুক্তিকে কখনোই স্বীকৃতি দেওয়া হবে না।

পুতিনের আজকের ঘোষণার পর ভবিষ্যতে কী হতে পারে, তা নিয়ে আল–জাজিরার সঙ্গে কথা বলেছেন কিয়েভভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাদিম কারাসেভ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়টি এভাবেই (শুধু পুতিনের ঘোষণাতে) শেষ হবে। এরপরও সামরিক তৎপরতা চলবে। আর নিজেদের অঞ্চলগুলো রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে ইউক্রেন।’

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে মস্কো। সম্প্রতি যুদ্ধে রুশ সেনাদের নাস্তানাবুদ হওয়ার খবর আসে। এরই মধ্যে আচমকা ইউক্রেনে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই চার অঞ্চলে গণভোটের ঘোষণা দেন পুতিন। গণভোট শেষে অঞ্চলগুলোকে আজ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা আসতে পারে বলে গুঞ্জন উঠেছিল।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button