অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

রাজধানীতে ভয়ঙ্কর সক্রিয় ‘গ্রিল কাটা চোর’ বেড়ে গেছে

রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের ২/এ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ষষ্ঠতলার ডুপ্লেক্স বাসায় সপরিবারে বসবাস করেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজি খন্দকার মোজাম্মেল হোসেন। গত ২৩ আগস্ট সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন ওপরের একটি কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা।

বাসার ঘরের আলমারি ভাঙা। লকারে থাকা গহনার বক্সও নেই। বক্সে প্রায় ৪৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। যার বাজার মূল্য ৪০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ৪০০ সিঙ্গাপুরের ডলার ও ১৫০ রিংগিত ছিল। বাসায় ঢুকে সব লুট করে নিয়ে গেছে চোর। ৩২ বছর ধরে এই বাসায় আছেন পুলিশের এই অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজি। মূল্যবান সবকিছু লুট হওয়ার এক মাস পরও পুলিশ গ্রিলকাটা চোর চক্রটিকে ধরতে পারেনি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের একটি সূত্র বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে জুন মাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে ২৭টি। জুলাই মাসে চুরির সংখ্যা ৭০টি। আগষ্ট মাসের চুরির ঘটনাগুলোসহ বিভিন্ন সড়ক ও দোকানে তিন মাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩০০টি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনায় চোর চক্রকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করেছে। চুরি হওয়া কিছু পণ্য উদ্ধারও করেছে পুলিশ।

সম্প্রতি রাজধানীতে এ ধরনের চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। সীমানা প্রাচীর টপকে বা বড় বড় ভবনের জানালার কার্নিশ বা বাথরুমের পয়:নিষ্কাশনের জন্য লাগানো পাইপ বেয়ে উঠে গ্রিল কেটে লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। সাবেক বা বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তা কিম্বা জন প্রতিনিধিদের বাসা-বাড়িতেও ঘটেছে চুরির ঘটনা। সিসি ক্যামেরা লাগিয়েও চোরের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী।

গত ২০ আগস্ট রাতে কলাবাগান থানার লেক সার্কাস ডলফিন গলির ৭০/এ বাসার দ্বিতীয় তলায় গ্রিল কেটে চোর চক্রটি ৭২ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ এক লাখ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায়। ঘটনাটি তদন্ত করে পুলিশ গ্রিলকাটা চোর চক্রের সদস্য সোহেল (৪০), ফরহাদ (৩০), ইলিয়াস শেখ (৩০) ও আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে আনোয়ারকে (৩৩) গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তল, ১১১ রাউন্ড গুলি, ৩টি ম্যাগাজিন, ৩ ভরি চোরাই স্বর্ণ ও স্বর্ণ বিক্রির ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটায় রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে আলমারি থেকে ১০ লাখ টাকা চুরি করে পালিয়ে যায় একটি চোর চক্র। এই ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মামলা হয়। মামলার তদন্ত করেতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ চুরিতে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। পরে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিম শরীয়তপুর এবং রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রিল কেটে চোর চক্রের দুইজন দুর্ধর্ষ চোর জিসান ও রনিকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, গ্রিলকাটা চোর চক্রের কাছে বিদেশি পিস্তল উদ্ধারের ঘটনা নতুন। তার মানে চক্রটি এখন অনেক শক্তিশালী। এরা আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে।

দুই চোরের চুরির ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মশিউর রহমান বলেন, ১১ সেপ্টেম্বর রাতে জিসান সহযোগী রনির মোটরসাইকেলে করে কেরাণীগঞ্জের আটিবাজার থেকে রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের পেছনে যান। সেখানে ২/৩টি বাসায় চুরির চেষ্টা করেন।

কিন্তু বাসা-বাড়ির কোনো দরজা, জানালা, বারান্দা খোলা, গ্রিল কাটা, ভাঙা বা বাঁকা করা সম্ভব না হওয়ায় ওই এলাকায় আর চুরি করতে পারেননি তারা। পরে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে হাতিরপুল কাঁচা বাজারের সামনে যান। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে হেঁটে এলিফ্যান্ট রোডের ৫২ নম্বর সড়কে ২/৩টি বাসায় গ্রিল বেয়ে উপরে উঠে চুরির চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন তারা।

পুলিশ বলছে, চুরির ঘটনাগুলোর তদন্তে গতি বাড়ানোর পাশাপাশি চোর ধরতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। বাহিনীটির আটটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এবং ৫০টি থানার ওসিদের চোর ধরতে এবং চুরির ঘটনার মামলার আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

একটি চুরি করতে ব্যর্থ হয়ে এলিফ্যান্ট রোডের নতুন-পুরাতন ৫২ নম্বর সড়কের ২১০/১ বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকে বারান্দার গ্রিল বেয়ে তিন তলার বাসায় চুরি করতে প্রবেশ করেন জিসান। ওই বাসার দরজা খোলা দেখতে পেয়ে সেখানে ঢুকেন তিনি। রনি নীচে থেকে চারপাশে নজর রাখতে থাকেন। বাসায় ঢুকে জিসান একটি কাঠের আলমারি খুলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে গ্রিল বেয়ে নীচে নেমে রনির মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে আবারও কেরাণীগঞ্জে চলে যান।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রিলকাটা চোরদের গ্রেপ্তার করা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। কারণ তারা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক সচেতন।

বাংলা ম্যাগাজিন /এসকে

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button