ঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু

তানজিলা মোস্তাফিজ শ্যামলীতে একটি বেসরকারি সংগঠনে (এনজিও) কর্মরত। বছিলা থেকে তিনি প্রজাপতি বাসে করেই যাতায়াত করেন। ই-টিকিটিং চালুর বিষয়টিকে তিনি বিশেষ করে নারী যাত্রীদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখছেন। আগে অফিস শুরু ও ছুটির পর বাসে উঠতে হুড়োহুড়ি করতে হতো।

এখন ই–টিকিট চালুর ফলে এই হুড়োহুড়ি হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তোলার যে প্রতিযোগিতা ছিল, তা–ও আর হচ্ছে না। যাত্রীরা টিকিট কেটে দাঁড়াচ্ছেন; যে বাস আগে আসছে, সেই বাস যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। ফলে বাসের ভেতর একটু বসে আরামে গন্তব্যে যাওয়া যাচ্ছে।

মাহবুবা হোসেন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। বাসা মিরপুর ১ নম্বরে। প্রতিদিন বাসে করে যাতায়াত করতে হয় তাঁকে। বললেন, সকালে দিশারি পরিবহনের বাসে ধানমন্ডি আসেন। ভাড়া দিতে হয় ২০–২৫ টাকা।

রাতে ফেরার সময় আসাদগেট থেকে প্রজাপতি পরিবহনের বাসে যেতে ২০ টাকাই দিতে হতো। তবে দুই দিন ধরে প্রজাপতি বাসে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালুর ফলে রাতে ফেরার সময় এক দিন ১৩ টাকা, আরেক দিন ১৫ টাকা ভাড়া দিয়েছেন।তিনি আরও বলেন, দুই টাকা ভাংতি নেই বলে ১৩ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা ভাড়া নিয়েছে।

এ ধরনের কাজ না করলে ভাড়া তো প্রায় অর্ধেক কমে যাচ্ছে। এটা খুবই ভালো হবে যাত্রীদের জন্য। শুধু স্টপেজে গিয়ে যাত্রী কোথায় যাবেন, তা বলার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট বের করে তা হাতে তুলে দিচ্ছেন বিশেষ পোশাক গায়ে দেওয়া কর্মীরা। সব বাসে এটা চালু হলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাজধানীতে অতিরিক্ত বাসভাড়া আদায় নিয়ে বিভিন্ন সময় যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিরসনে ই-টিকিটিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় ঠেকাতে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহন কোম্পানিতে ই-টিকিটিং চালু হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর এটি চালু হয়। এতে সরকার নির্ধারিত হারে একজন যাত্রী যত কিলোমিটার যাবেন, তিনি ঠিক তত দূরত্বের জন্যই ভাড়া দেবেন।

বাসে চড়ার আগে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রজাপতি ও পরিস্থানের ই-টিকিটিং ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন এমন কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়। পরিস্থানের কর্মী মো. কবির হোসেন হাতের ডিভাইস থেকে যাত্রীদের টিকিট দিতে দিতে বললেন, ‘ঝামেলা বাড়ছে; আবার অনেক বেকারের কর্মসংস্থানও হইছে। এখন তো লোক বাড়াইতে হইতাছে প্রতি স্টপেজে।’

মাহবুবা বা তানজিলা নতুন এ পদ্ধতিকে স্বাগত জানালেও অনেক যাত্রী এখন পর্যন্ত এ পদ্ধতিকে সেভাবে স্বাগত জানাতে পারছেন না। আগে সড়কের যেকোনো জায়গা থেকে হাত তুললেই বাস থেমে যেত। বাসে চড়তে টিকিটের জন্য সময় নষ্ট করতে হতো না।

এখন তো আর স্টপেজের বাইরে থেকে বাসে চড়াই যাচ্ছে না। তবে এই মনোভাব পোষণ করা বেশ কয়েকজন যাত্রীর স্বীকারোক্তি, বাসে চড়ার পর অবশ্য ভাড়া নিয়ে বাসের সহকারীর সঙ্গে প্রায় সময় তর্ক করতে হতো। টিকিট থাকলে যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

ই-টিকিটিং চালুর ফলে বাসের কর্মীদের ব্যস্ততাও বেড়েছে। এইচএসসি পড়ুয়া ইয়াসিন আরাফাত মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রজাপতি স্টপেজে বসে টিকিট দিচ্ছিলেন। এক মা ও স্কুলপড়ুয়া মেয়ে এসে কল্যাণপুরের টিকিট চাইলেন। টিকিট কাটার পর দেখা গেল, আগে মা ও মেয়ে যে ভাড়ায় যেতেন, এখন সে তুলনায় ভাড়া কিছুটা বেশি লাগছে। কেননা, আগে শিক্ষার্থী হিসেবে মেয়ের হাফ ভাড়া পাঁচ টাকা রাখা হলেও এখন ই-টিকিটিংয়ে সর্বনিম্ন ভাড়া রাখা হচ্ছে ১০ টাকা। এই মা প্রথমে টিকিট নিতে আপত্তি জানালেও পরে বাসে ওঠেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে চারটি পরিবহনে ই-টিকিটিং শুরু হয়েছে। প্রথম এ পদ্ধতি চালু করেছে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে ঢাকেশ্বরীগামী মিরপুর সুপার লিংক, ঘাটারচর থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি ও পরিস্থান, গাবতলী থেকে গাজীপুরগামী বসুমতি পরিবহনের বাস।

২৮ সেপ্টেম্বর আরও তিনটি অছিম পরিবহন, রাজধানী পরিবহন ও নূরে মক্কা পরিবহনে এ ব্যবস্থা চালু হবে। সহজ ডটকম এবং যাত্রী নামের দুটি কোম্পানি এ কাজে সহায়তা করবে।তিনি আরও বলেন, ‘পরিবহন খাতকে নিয়মনীতির আওতায় আনার জন্য বিশাল কাজ হাতে নিয়েছি। পরিবহন খাতসংশ্লিষ্ট অনেকের স্বার্থে আঘাত লাগছে বলে এ কাজে বাধাও আসছে। তবে আমরা আপস করব না। আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, ‘আড়াই হাজার পরিবহন মালিককে সচেতন করতে বিভিন্ন সভা করছি। ই-টিকিটিং চালুর বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি সহযোগিতা চেয়ে। আপাতত ই-টিকিটিং চালুর বিষয়টি বাধ্যতামূলক না হলেও আস্তে আস্তে সব পরিবহনে বাধ্যতামূলক করা হবে।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button