গাজীপুরঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট, চরম ভোগান্তি

রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকা পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। যানজট গাজীপুর পর্যন্ত রয়েছে।আজ রোববার ভোরের বৃষ্টিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ডের গোলচত্বর এলাকায় প্রায় হাঁটুপানি জমে যায়। এরপর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকায় কেউ তিন ঘণ্টা, কেউ বা চার ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়েন।

বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকা মহানগর উত্তরা ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিমানবন্দর এলাকায় বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কারণে এমনিতেই মহাসড়ক এখন অনেক সরু। এর মধ্যে বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে যায়। পানি জমে থাকায় চালকেরা খানাখন্দ ও গর্ত বুঝতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পথে দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার থেকে বিমানবন্দর এবং রাজধানীর বনানী থেকে টঙ্গীর চেরাগ আলী পর্যন্ত তীব্র যানজট রয়েছে। ঢাকায় ঢোকার মুখে আবদুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজট আছে।

যানজটে আটকে থাকা অনেক যাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) দুর্ভোগের বিষয়টি বলেন। কেউ কেউ দুই থেকে তিন ঘণ্টা একই জায়গায় বাসের ভেতর বসে থাকার কথা, কেউ আবার বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত পায়ে হেঁটে রওনা দেওয়ার কথা বলেন।

রাজধানীর উত্তরার আজমপুর এলাকায় থাকেন শ্যাম সাগর মানখিন। মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের উদ্দেশে রওনা দিতে বাসা থেকে বের হন সকাল আটটায়। তিনি বলেন, ‘আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠি সাড়ে আটটার দিকে। বাসে উঠেই যানজটে আটকা পড়ি। পরের তিন ঘণ্টায় গাড়ি জসিমউদ্‌দীন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায়। বেলা সাড়ে ১১টার সময় বাসটি জসিমউদ্‌দীনের আড়ংয়ের বিপরীত পাশে ছিল।

আজমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে জসিমউদ্‌দীন বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব ৮৫০ মিটার। হেঁটে ওইটুকু পথ যেতে ১০ থেকে ১২ মিনিট সময় লাগে। গাড়িতে তিন থেকে পাঁচ মিনিট।’শ্যাম সাগর আরও বলেন, ‘পরে বাস থেকে নেমে প্রথমে রাইড শেয়ারিং নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু পাওয়া যায়নি। তাই হাঁটতে শুরু করি। হেঁটে হেঁটে বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আসি। সেখান থেকে আবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অন্য একটি বাসে উঠি।’ বেলা ১টা ১০ মিনিটের দিকে তিনি বিজয় সরণি এলাকায় রয়েছেন বলে জানান।

ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল বেলা পৌনে একটার দিকে বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে অপসারণ করা হয়েছে। এখন যানবাহন চলতে পারছে। যানজটের সারি বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ এলাকা পর্যন্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।  উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরের একটি কাপড়ের প্রদর্শনকেন্দ্রে বিক্রয়কর্মীর কাজ করেন সজীব রুরাম। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বাজে মুহূর্ত কাটাচ্ছি (বনানী থেকে উত্তরা হেঁটে যাচ্ছি) ট্রাফিক জ্যাম পর্ব-৩।’

আবদুল্লাহপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পরিদর্শক মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘টঙ্গীর মিলগেট এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের গর্ত-খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় কোনো গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে গাজীপুর অংশে ঢুকতে পারছে না। আবার বিমানবন্দর এলাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমেছে। এ কারণে গাজীপুর থেকেও কোনো গাড়ি ঠিকমতো ঢাকায় ঢুকতে পারছে না। তাই সকাল থেকেই মানুষ খুব কষ্ট করছে। আমরাও চেষ্টা করছি যান চলাচল স্বাভাবিক করতে।’

রাজধানীর বারিধারা থেকে চার ঘণ্টায় বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন বলে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আজমির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি।রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে কথা হয় যাত্রী রুবিনা হকের সঙ্গে।  তিনি বলেন, সকাল আটটায় বোর্ডবাজার থেকে ঢাকার কাকরাইলের উদ্দেশে বাসে উঠেছেন। প্রায় চার ঘণ্টা বাসে বসে থেকে তিনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন। তাই বাধ্য হয়েই একপর্যায়ে হাঁটা শুরু করেছেন।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, আবদুল্লাহপুরের দিকে সড়কে থাকা যানবাহনগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেকক্ষণ পর অল্প কিছু সময়ের জন্য যানবাহনগুলো চলছে ধীরগতিতে। এরপর আবার দাঁড়িয়ে পড়ছে একইভাবে এতে বিরক্ত হয়ে যাত্রীদের কেউ কেউ হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button