অর্থ ও বাণিজ্যএক্সক্লুসিভবাংলাদেশব্যাংকিং

গত সাত মাসের মধ্যে প্রবাসী আয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে

রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে বৈধ চ্যানেলে ১৫৪ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।প্রবাসীদের এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১০ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার।

সংকট কাটাতে ব্যাংকে বেঁধে দেওয়া হয়েছে ডলারের সর্বোচ্চ দাম। আর ডলারের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়ার পর প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে যে আয় এসেছে, তা গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।গত এপ্রিল থেকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দেয়। এরপর ব্যাংকগুলো বেশি দাম দিয়ে ডলার সংগ্রহ শুরু করে। ফলে গত এপ্রিল, জুলাই ও আগস্টে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। এরপর ৯ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তা কমে ৪১ কোটি ২৮ লাখ ডলারে নামে। ১৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আসে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ এবং ২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রেমিট্যান্স আসে ২৭ কোটি ৪১ লাখ ডলার।

গত সেপ্টেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৪ কোটি মার্কিন ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ডলার। ফলে আগের মাসের তুলনায় আয় কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৭২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রবাসী আয় কমেছে ১১ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানান, দর নির্ধারণের আগে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে ব্যাংকগুলো ১১০ থেকে ১১৪ টাকা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে পড়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর অনেকটা বাধ্য হয়ে দর ঠিক করা হয়। পরবর্তীতে রেমিট্যান্সের দর আরও কমিয়ে এখন ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়েছে।

এতে করে কয়েকদিন আগেও প্রতি ডলারে যে অর্থ পাচ্ছিলেন এখন সে তুলনায় ৩ থেকে সাড়ে ৬ টাকা কম পাচ্ছেন। এতে অনেকে হয়তো ব্যাংকিং চ্যানেলে না পাঠিয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। খোলাবাজারে বর্তমানে প্রতি ডলার ১১৫ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডলার-সংকট প্রকট হওয়ায় গত মাসের শুরুতে দাম নির্ধারণের দায়িত্ব ব্যাংকগুলো তথা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) মিলে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে।

প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম এখন ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দাম ৯৯ টাকা। এই দুই দামের গড় মূল্যের চেয়ে এক টাকা বেশি খরচ ধরা হয় আমদানির দায় নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে।এরপর থেকেই রেমিট্যান্স কমছে।

এদিকে আমদানি খরচ বাড়ায় গত এপ্রিল থেকে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে ডলারের চাহিদা মিটছে না। এতে ডলারের সংকট তৈরি হয় এবং প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২০ টাকা। আমদানিতে ডলারের দাম দিতে হচ্ছে প্রায় ১০৫ টাকা। ডলার-সংকট মেটাতে গত সাত মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয়েছে ৩ হাজার ৬৪০ কোটি বা ৩৬ বিলিয়ন ডলার। তবে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ, বিভিন্ন খাতে রিজার্ভের আট বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ফলে দেশে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ২ হাজার ৯০০ কোটি বা ২৯ বিলিয়ন ডলার।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button