অপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

৫০ বছর ধরে চুরিই তাদের পেশা, তাঁরা মুরব্বী চোর

চুরি শুরু আট বছর বয়স থেকে। প্রায় ২২ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় লোহা, ছোট জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রি করতেন। এভাবে চুরি করতে গিয়ে অনেক চোরের সঙ্গে পরিচয় হয়। কয়েকজন মিলে গড়ে তোলেন চোর চক্র।

পরবর্তী সময়ে এই চক্রের সদস্যরা মিলে বাসাবাড়িতে সোনার অলংকার চুরি করা শুরু করেন।এভাবে প্রায় ৫০ বছর ধরে চুরি করে আসছেন জব্বার মোল্লা। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা একাধিক মামলা থাকলেও কখনো গ্রেপ্তার হননি তিনি।

বিগত ২০ থেকে ২২ বছর ধরে তারা দরজা ভেঙে বাসায় ঢুকে চুরি করা শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত তারা ছোট বড় প্রায় হাজারখানেক বাসায় চুরি করেছে। চুরির টাকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে। তবে রেহাই মিলেনি। ঢাকার খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসায় চুরির ঘটনায় করা মামলার এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম।

গতকাল শনিবার ঢাকা থেকে জব্বার মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁদের কাছ থেকে ৯ ভরি সোনা, ৮২ ভরি রুপা ও প্রায় ১৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন জামাল শিকদার, আবুল ও আজিম উদ্দিন। এ ছাড়া চোরাই সোনা কেনার অপরাধে টঙ্গী এলাকার জুয়েলারি দোকানের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন ও তাঁতীবাজার এলাকার জুয়েলারি দোকানের মালিক মো. আবদুল ওহাবকে গ্রেপ্তার করা হয়।তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোরাইকৃত স্বর্ণালংকার ও টাকা উদ্ধার করা হয়।

ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার এস এম রেজাউল হক বলেন, গত ১৭ই আগস্ট খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-২ এর ১৫ নং রোডে ডাক্তার দম্পতির বাসায় দিনের বেলায় দুর্ধর্ষ চুরি হয়। বাসায় দারোয়ান ও সিসিটিভি না থাকার সুযোগে চোর চক্রের সদস্যরা বাসায় নির্বিঘ্নে ঢোকে তৃতীয় তলার দরজা ভেঙে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে।

আলমারি লক ভেঙে তারা  ৪২ ভরি স্বর্ণ ও ৪ হাজার ইউএস ডলার চুরি করে। ঘটনার সংবাদ পেয়ে তদন্তে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। বাদীর সঙ্গে আলোচনা, মামলার এজাহার পর্যালোচনা এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তথ্য সংগ্রহ করে গোয়েন্দা সদস্যরা।

তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণে আসামিদের শনাক্তকরণে সক্ষম হয় ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের সদস্যরা। আসামিদের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে শনিবার ঢাকার পল্লবী থেকে চুরির সময় হাতেনাতে চোর-চক্রের সদস্য জব্বার মোল্লাহ, আজিমুদ্দিন  জামাল (৪৪), মোঃ আবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে দরজা এবং আলমারি ভাঙার বিভিন্ন উপকরণ পাওয়া যায়।

আজ রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জব্বার প্রায় ২০০ বাড়িতে চুরি করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। এই দীর্ঘ সময় বাসাবাড়ি থেকে চুরি করা প্রায় ৫০০ ভরি সোনা তিনি তাঁতীবাজার এলাকায় বিক্রি করেছেন। আরও প্রায় ২০০ ভরি সোনা তিনি টঙ্গীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রি করেছেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা প্রহরী নেই এমন বাসায় সাদা পাঞ্জাবি–পায়জামা পরে ঢুকে পড়েন জব্বার ও তাঁর সহযোগীরা। সন্দেহ এড়াতে এমন বেশভূষা ধরতেন জব্বার। যেসব বাসার দরজা বন্ধ থাকে, সাধারণত সেগুলোই তাঁরা চুরির জন্য বেছে নেন। বাসায় ঢুকে আলমারি ভেঙে স্বর্ণালংকার, টাকা ও ডলার চুরি করেন তাঁরা। বাসায় অন্য কিছু থাকলেও সেগুলো চুরি করেন না এই চক্রের সদস্যরা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, জব্বার মোল্লা চারটি বিয়ে করেছেন। চুরির টাকা দিয়ে তাঁদের সুন্দরভাবে ভরণপোষণ করেন। এ ছাড়া তিনি নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনেছেন।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button