অপরাধদুর্নীতিবাংলাদেশ

বিএসইসি সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ উঠেছে।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের গোপন তথ্য জেনে তিনি কোম্পানিটির সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন।

এভাবে শেয়ার বেচে আলমগীর কবির প্রায় আড়াই গুণ মুনাফা তুলেছেন। তাঁর স্বার্থসংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস থেকেও প্রচুর শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। বে-লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদনের যথার্থতা এবং ইনসাইডার ট্রেড নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বিএসইসি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শেয়ারবাজারের আইনে ইনসাইডার ট্রেডিং গুরুতর অপরাধ।

আলমগীর কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য জানতে পারেন এমন ব্যক্তিদের অন্যতম। তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম বে-লিজিংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালকদের একজন, পরিচালক তারিক সুজাত ভাগনে আর পরিচালক জুবায়ের কবির তাঁর ভাতিজা। স্বতন্ত্র পরিচালক জাইদি সাত্তার সাউথইস্ট ব্যাংক ফাউন্ডেশনের পরিচালক। আবার শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বে-লিজিংয়ের ইভিপি এম মনিরুজ জামান খান সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালক পদেও আছেন।

২০১০ সাল থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস বে-লিজিংয়ের প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল। বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের মালিকানায় আছে ১ কোটি ৪০ লাখ ১২ হাজার ৪০৫টি শেয়ার, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসের মালিকানায় গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বে-লিজিংয়ের ১ কোটি ৩৬ লাখের বেশি শেয়ার ছিল, যা ছিল ওই সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

ধারণা করা হয়, গোপন এ তথ্য জেনে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বে-লিজিংয়ের অন্যতম প্রধান শেয়ারহোল্ডার সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস ১ কোটি ৩৬ লাখ শেয়ার থেকে ১ কোটিরও বেশি বিক্রি করে। এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির তাঁর ব্যক্তিগত বিও হিসাবে থাকা প্রায় ৪০ লাখ শেয়ারের পুরোটাই বিক্রি করেন।

তদন্ত কমিটি :বে-লিজিংয়ের আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখতে গত ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটি করে বিএসইসি। কমিটিকে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রান্তিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কোনো ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইনসাইডার ট্রেডিং হয়েছে এমন প্রাথমিক তথ্য জেনেই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে সব ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কাছে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য থাকলে তা জানাতে চিঠি দিয়েছে।

২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস দেখিয়েছিল ২ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে বছরের শেষে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বছরজুড়ে শেয়ারপ্রতি নিট ৯৯ পয়সা লোকসান হয়েছে। বিএসইসি কর্মকর্তারা মনে করেন, এ তথ্য খুবই অস্বাভাবিক। এ সময়ে দেশের আর্থিক খাতে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে এমন বড় কোনো নেতিবাচক অবস্থা ছিল না, যার কারণে এত বড় লোকসান হতে পারে।

আলমগীর কবিরের বক্তব্য পাওয়া যায়নি :এ ব্যাপারে কথা বলতে কয়েকদিন আলমগীর কবিরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে এসএমএস পাঠানো হয়। ওই এসএমএস তাঁর নজরে এলেও তিনি সাড়া দেননি।

জানতে চাইলে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এয়ার কমডোর (অব.) মো. আবু বকর সমকালকে বলেন, ‘যখন এ শেয়ার বিক্রি হয় তখন আমি অসুস্থতাজনিত কারণে অফিস করিনি।’ তিনি বলেন, স্বাভাবিক লেনদেনের অংশ হিসেবে বে-লিজিংয়ের শেয়ার বিক্রি হয়েছে। ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের অভিযোগ সঠিক নয়।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button