জাতীয়বাংলাদেশরাজধানী

জন্মনিবন্ধনে জনগনের ভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দুই মেয়র

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের জটিল প্রক্রিয়া ও জনভোগান্তি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকার দুই মেয়র আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব জিয়াউল আলম, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্থার) সামসুল আরেফিন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ ড. সাজা ফারুক আব্দুল্লাহ প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, জন্ম নিবন্ধনে প্রতিটি ধাপে ধাপে সব জায়গায় মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এর একটা সমাধানে আসা উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের লোকজন যখন জন্ম নিবন্ধনের কাজ করে তখন বারবার সার্ভার সমস্যা হচ্ছে। সার্ভার সমস্যা যখন সৃষ্টি হয় তখন কাজগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের পক্ষ সংশ্লিষ্টদের হেল্প লাইন নম্বরে ফোন দেওয়া হয়, জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কেউ তখন ফোন ধরে না। তাহলে এ বিষয়টা সমাধান কীভাবে হবে, কাউকে তো এটার রেসপন্সিবিলিটি নিতে হবে। দিনভর সার্ভার বন্ধ থাকার কারণে আমরা আর দিনের বেলা সার্ভিসটা দিতে পারি না। রাত যখন হয় তখন আবার দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে।

৬ অক্টোবর ছিল জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন দিবস। এ উপলক্ষে আজ আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ সময় রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমস্যাগুলো টুকে রাখতে বলেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান জানান, কেন জনসংখ্যার চেয়ে জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা বেশি।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সার্ভারের পর্যাপ্ত ক্ষমতা নেই। স্কুল-কলেজে ভর্তি হওয়ার যখন সময় আসে তখন লাখ লাখ মানুষ তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য আমাদের কাছে আসে। কিন্তু আমরা সেই সার্ভিসটা দিতে পারি না। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের সার্ভারের দুর্বলতার কারণে গালি শুনতে হয় আমাদের।

তিনি আরও বলেন, মানুষ যখন তার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে আসে তখন তার কোনো কারণে ভুল হতেই পারে, কিন্তু যদি কোনো কারণে ভুল হয়ে যায় তাহলে সেই ভুল সংশোধনের জন্য সেই নাগরিককে যেতে হয় ডিসি অফিসের কার্যালয়ে, এটা আরেক ভোগান্তি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, জন্মনিবন্ধন ভোগান্তি বিষয়ে মানুষের অসন্তোষ এবং ক্ষোভের রোষাণলে আমাদের জনপ্রতিনিধিদের পড়তে হয়। কারণ মানুষের যখন কিছু করার থাকে না, কোনো উপায় পান না, তখন কিন্তু তারা জনপ্রতিনিধির কাছে আসেন এবং তাদের সমস্যার কথা জানান। সেই সঙ্গে তাদের অসন্তোষের কথা জানান।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, আমরা দালালের দৌরাত্ম্য দূর করতে, অনিয়ম দূর করতে একটা সিস্টেম করেছি। সেটি হচ্ছে সিটি করপোরেশন আঞ্চলিক কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধন করাতে যারা আগে আসবেন, তাদেরকে একটি ক্রমিক নম্বর দেওয়া হবে। সেই ক্রমিক নম্বর অনুযায়ী একজনের পর অন্যজনের সমস্যার সমাধান করা হবে। তাহলে মানুষ আর দালালের কাছে যাবে না, অবৈধ পথে যাবে না। এভাবে কিছুটা ভোগান্তি দূর করার জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কিন্তু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের যে সার্ভার রয়েছে তার সক্ষমতা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে আসল ডিজিটাইলাইজেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রথমেই তাদের সার্ভারের সক্ষমতা বাড়িয়ে জনগণের ভোগান্তি দূর করতে হবে। জন্মনিবন্ধন কেন্দ্রিক যে প্রক্রিয়াগত জটিলতাগুলো রয়েছে এগুলো দূর করে সাধারণ মানুষের জন্য যত সহজভাবে করা যায় সেটা করার উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ সারা ফারুক আবদুল্লাহ। তাঁরা জন্মনিবন্ধন নিয়ে আরও সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এখন ৫৬ শতাংশ মানুষের জন্মনিবন্ধন হয়েছে বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নিয়ে অনন্য কাজ করায় ৪০টি জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে পুরস্কৃত করা হয়। শ্রেষ্ঠ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে রাজশাহী বিভাগ, যশোর জেলা, যশোরের কেশবপুর উপজেলা, রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নওগাঁ পৌরসভা, সিরাজগঞ্জের শিয়ালকোল ইউনিয়ন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, দুবাই।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button