অর্থ ও বাণিজ্যবাংলাদেশ

বাজারে কোনোখানেই মিলছে না সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি

বাজারে কোনোখানেই মিলছে না সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিনি।আবার কোথাও পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে  বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারসাজির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে চিনির দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা- অভিযোগ ক্রেতাদের। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে খোলা চিনির দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি প্রায় উধাও।

পাইকারদের অভিযোগ, মিলগেট থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে প্যাকেটের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে খুচরা বাজারে। ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে দাম নির্ধারণের এক মাস পেরিয়ে গেলেও তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা।

সরকার দাম ঠিক করে দেয়ার পরও তিন থেকে চারদিনের ভেতরে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিষয়টি তদারকি করতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

ক্রেতারা বলছেন, জনগণকে জিম্মি করে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের কোনো নিয়ম-নীতি মানছে না।নিজেদের ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের কারণে তাদের উৎপাদন কমেছে। যার জন্য বাজারে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

খুচরা বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১১ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে চিনি। গত ২২শে সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির মূল্য ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৯৫ টাকা কেজি ও ১০০ টাকার উপরে।খুচরা দোকানিরা বলছেন, বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।

তথ্য মতে, দেশে চিনির মোট চাহিদার বড় একটি অংশ মেটানো হয় আমদানি করা চিনির মাধ্যমে। এই চিনি আমদানি হয় মূলত সিটি, মেঘনা, এস আলম, ঈগলু ও দেশবন্ধু গ্রুপের হাত ধরে। ব্যবসায়ীরা এখন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের অজুহাতে চিনির দাম বাড়াচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে চিনির সব ধরনের কাঁচামাল রয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুসারে চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে উৎপাদন খরচও বাড়ছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় চিনি সরবরাহ কম থাকায় চিনির দাম বাড়ছে।

দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার দর মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, এক সপ্তাহ আগে চিনির কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেই চিনি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকা ১০০ টাকায়।

মেঘনা গ্রুপের ডিলার দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোম্পানিতে চিনি নেই, চিনি সংকট এ কারণে আমরা চিনি পাচ্ছি না। তাই দোকানদারদের দিতে পারছি না। কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে কোম্পানি জানিয়েছে, গ্যাস সংকটের কারণে চিনির উৎপাদন কমে গেছে।

এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের প্রধান বিক্রয় কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, কোম্পানিতে চিনির কাঁচামালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় চিনি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। কোম্পানির দিনে ৫ হাজার টন চিনি পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু পরিশোধন করছে মাত্র ১ হাজার টন। ফলে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানা বলেন, শনিবার রাজধানীতে অধিদপ্তরের তিনটি টিম নেমেছে। বিশেষ করে চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান-মিল ও পাইকারি বাজারে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশিতে চিনি বিক্রির দায়ে ঢাকার মিরপুরের সাত প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানরা করেছে অধিদপ্তর টিম।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button