অর্থ ও বাণিজ্যএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজধানী

পাঁচ টাকার মোমবাতি ২০ টাকা হয়ে গেছে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় থাকেন চাকরিজীবী ইমরান খান। বাজার থেকে দুটি মোমবাতি কিনেছেন, বাসায় এসে দাম বলতেই সবাই অবাক। কারণ প্রতিটি মোমবাতির দাম নিয়েছে ২০ টাকা।তিনি বলেন, ‘পাঁচ টাকার মোমবাতি ২০ টাকা হয়ে গেছে।

আমরা আগে যে মোমবাতি পাঁচ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা নিয়েছে ২০ টাকা। তা-ও সহজে পাওয়া যায় না। সব মুদি দোকানে নেই। কিছু দোকানে পাওয়া যায়। ’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুত্সংকটের সুযোগে বাজারে আরেক কারসাজি শুরু হয়েছে। ’

রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার পশ্চিম রাজাবাজারের ডিএইচ বিজনেস সেন্টারের বিক্রয়কর্মী মো. মুন্না বলেন, ‘আমরা খুচরা বিক্রি করি ১৫ টাকা পিস। আগে এমন দাম ছিল না। আমাদের এখানে দুই ধরনের মোমবাতি বিক্রি করতাম। আগে আমরা পাঁচ টাকা আর ১০ টাকা পিস বিক্রি করেছি। এখন পাঁচ টাকার চিকনটা ১০ টাকা আর ১০ টাকারটা ১৫ টাকা বিক্রি করছি। দাম ডাবল হয়ে গেছে। প্রায় দেড়-দুই মাস ধরেই বেশি দামে বিক্রি করা লাগছে। যারা সরবরাহ করে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ’

বাজারে মোমবাতির এমন বাড়তি দাম দেখে অনেকেই অবাক হচ্ছেন। সারা দেশের সঙ্গে ঢাকা শহরেও লোড শেডিং বাড়ায় চাহিদা বেড়েছে মোমবাতির। এই সুযোগে পণ্যটির দাম পাইকারি বিক্রেতারা বাড়িয়েছেন বলে দাবি করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা বলছেন, বেশি দামে ক্রয় করলে বিক্রিও সেভাবেই করতে হবে। তবে ধানমণ্ডি, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাইকাররা যা বৃদ্ধি করেছেন, খুচরা বিক্রেতারা তার দ্বিগুণ দামে বিক্রি করেন। আর যখন বিদ্যুৎবিভ্রাট হয় তখন তো সোনায় সোহাগা।

দাম বেশি হলেও বিদ্যুত্সংকটের এ সময়ে মোমবাতির কদর বেড়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। যদিও ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বিকল্প ভাবতে শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে চার্জার লাইটের চাহিদা বেড়েছে। গ্রিন রোডের কাজি অ্যান্ড ব্রাদার্স ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক কাজি আহসান উল্লাহ বলেন, ‘মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যুৎ গেলেই চাহিদা বেড়ে যায়। আগের চেয়ে দাম বেড়ে গেছে।

ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আর দাম বাড়ার কারণে মোমবাতির বিকল্প ভাবা শুরু করেছে লোকজন। তারা চার্জার লাইটের দিকে ঝুঁকছে। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত পিস লাইট বিক্রি হয়। এখন প্রতিদিনই বিদ্যুৎ যাচ্ছে, আর কত মোমবাতি কিনবে মানুষ। ’ মোমবাতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে ১২ ডজন ছিল ৫৪০ টাকা। তিন টাকা ৭৫ পয়সা পিস ছিল। তখন সেটা পাঁচ টাকা করে বিক্রি করতাম। সেটাই এখন চার টাকা ৮০ পয়সা কেনা পড়ে। বিক্রি করি আট টাকা। আর ১০ টাকা যেটা ছিল, সেটার দামও বেড়ে গেছে। ’

চকবাজারে মোমবাতি পাওয়া এখন প্রায় কঠিন হয়ে গেছে বলে দাবি করেছেন খুচরা বিক্রেতারা। শুক্রাবাদের আল মদিনা স্টোরের এক বিক্রয়কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মোমবাতির খুবই সংকট চলছে। চকবাজারে ঘুরে ঘুরে, খুঁজে খুঁজে মোমবাতি নিয়ে আসা লাগছে। আগে সহজেই পাওয়া যেত, কিন্তু এখন তা পাচ্ছি না। ’

বিক্রেতারা জানান, পূজার সময় মোমবাতির চাহিদা বেশি থাকে। তবে বর্তমানে লোড শেডিংয়ের কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিক্রি ও উৎপাদন বেড়েছে, যা চলছে গত দু-তিন মাস ধরে।

রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর এলাকায় সোনামণি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি কারখানায় মোমবাতি প্রস্তুত করা হয়। প্রতিদিন উৎপাদনের সক্ষমতা ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজার পিস। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজি মনির বলেন, ‘আমরা উৎপাদন করি চাহিদার ভিত্তিতে। প্রতিদিন আমরা যা প্রস্তুত করি তা-ই বিক্রি হচ্ছে। আমাদের যেমন সক্ষমতা সে রকমই উৎপাদন করছি। দুই-তিন মাস আগে একটু কম বিক্রি হতো। এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার পিস উৎপাদন ও বিক্রি হতো। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতাই পাঁচ হাজার পিস। অর্থাৎ এখন আমাদের ক্যাপাসিটির সর্বোচ্চ উৎপাদন করছি। মোমবাতি তৈরি করে মৌলভীবাজার ও চকবাজারে দিয়ে দিই, ওখান থেকে উনারা সাপ্লাই দেন। পাইকারি ও খুচরা উভয় পদ্ধতিতেই বিক্রি করি। ’ দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন উৎপাদন খরচ বেড়েছে, তাই দামও বাড়াতে হয়েছে। ’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button