চাঁপাইনবাবগঞ্জদুর্ঘটনাবাংলাদেশরাজশাহী

পারিবারিক পিকনিকে গিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে দম্পতির মৃত্যু

‘ভাইয়া বাঁচান। নিশি ডুবে গেছে, আমিও ডুবে যাচ্ছি…’ বলতে বলতে পদ্মা নদীতে তলিয়ে যান ব্যাংক কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন কাদের ওরফে রূপম (৩৮) আর তাঁর স্ত্রী মানজুরি তানভীর ওরফে নিশি (৩২)। উদ্ধারের পর মানজুরি হাসপাতালে মারা যান আর সালাহউদ্দিনকে ডুবুরিরা খুঁজে পাননি।

এভাবেই আট ভাইয়ের একমাত্র বোন ও তাঁর স্বামীর ডুবে যাওয়ার বর্ণনা দেন ভাই আবদুস শামীম। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে পদ্মা নদীতে ৪৫ জনের একটি পারিবারিক পিকনিকে গিয়ে তাঁরা দুর্ঘটনার শিকার হন। জাতীয় দলের ক্রিকেটার সানজামুল ইসলামের পরিবার এটি। তিনিও ছিলেন এ দলে। তাঁর বোন মারা গেছেন আর ভগ্নিপতিকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিন উত্তরা ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় কর্মরত ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের গোদাগাড়ী স্টেশনের কর্মকর্তা নমির উদ্দিন বলেন, প্রথমে ওই দম্পতির বাচ্চা ডুবে যাচ্ছিল। বাবা বাচ্চাকে উদ্ধার করেন। এটা দেখে তাঁর স্ত্রীও পানিতে নামেন। তারপর দুজনেই ডুবে যাচ্ছিলেন। তখন একজন মাঝি তাঁর স্ত্রীর চুল ধরে টেনে তোলেন। কিন্তু তাঁর স্বামীকে আর ধরতে পারেননি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জ মহল্লার বিপরীতে বালুগ্রাম এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। অবশ্য এই দম্পতির ডুবে যাওয়ার স্থানটি পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সীমানায়।সানজামুলের ভাই শামীম জানান, তাঁদের আট ভাইয়ের মধ্যে একজন কানাডায় আছেন। ওই ভাই ছাড়া পরিবারের সবাই পিকনিকে গিয়েছিলেন। এমনকি যে বোন মারা গেছেন, তাঁর শাশুড়িও ছিলেন।

তিনি বলেন, দুটি বড় নৌকা একসঙ্গে বেঁধে ডেকোরেটর দিয়ে সাজিয়ে তাঁরা রওনা দিয়েছিলেন। দুপুরে নদীর চরে বাবুর্চিরা রান্না করছিলেন। তখন তাঁরা সবাই নদীতে নেমে গোসল করছিলেন। এ সময় তিনি ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিনের ডাক শুনতে পান। ‘ভাই বাঁচান, নিশি ডুবে গেছে, আমিও ডুবে যাচ্ছি।’ শামীম বলেন, ‘তিনি এইটুকু শুধু শুনতে পেয়েছেন। তারপরই পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন।

শামীম বলেন, তাঁর ছেলে তাশাফ ফুফুকে খুব ভালোবাসত। ও বল নিয়ে পানিতে ভাসছিল। সে ফুফুকে উদ্ধার করতে গিয়ে ভেসে যাচ্ছিল। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তিনিও (শামীম) ডুবে যাচ্ছিলেন। এক মাঝি তাঁর হাত ধরে টেনে তোলেন। তিনিসহ ছেলে বেঁচে যান। তার বোনটাকেও মাঝিরা টেনে তুলেছিলেন।

তখনো তার নিশ্বাস চলছিল। প্রথমে তাঁকে গোদাগাড়ী হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাজশাহীতে ভর্তি করার পরই তাঁর মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিনকে পাননি। কাল শনিবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান চালাবেন।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা নমির উদ্দিন বলেন, নদীর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় চর জেগেছে। তার পাশে কোথাও অল্প পানি, আবার কোথাও ৩০ থেকে ৪০ হাত গভীর পানি আছে। সেগুলো চোরাবালির মতো গভীর হয়ে আছে। দেখে বোঝার উপায় নেই। অনেকগুলো জায়গা এ রকম হয়ে আছে। তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন।

যে মাঝি ওই নারীকে উদ্ধার করেছেন, তিনি আসলে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কোন জায়গা থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করেছেন। এ জন্য অভিযান চালিয়েও তাঁরা সফল হতে পারেননি। তিনি বলেন, তাঁদের তিনজন ডুবুরি ও একজন নেতৃত্বদানকারী সদস্যসহ মোট ছয়জন ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছেন। কাল শনিবার সকাল আটটা থেকে আবার অভিযান চালানো হবে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button