Bangla News

হিজাব না পরা নারীদের শনাক্ত করতে গোপন ক্যামেরা বসাচ্ছে ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হিজাব না পরা নারীদের শনাক্ত করার জন্য প্রকাশ্য স্থানগুলোয় গোপন ক্যামেরা স্থাপন করতে শুরু করেছে ইরান। সেদেশের পুলিশ জানিয়েছে, যে নারীরা চুল ঢাকা কাপড় পরবেন না, তাদের ‘পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে’ লিখিত বার্তা পাঠানো হবে। খবর বিবিসি’র।

পুলিশের দাবি, হিজাব আইনের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, এর ফলে সেটি বন্ধ হবে।

গত বছর হিজাব ঠিকমত না পরার অভিযোগ তুলে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা রক্ষক পুলিশ।

পুলিশি হেফাজতে তার মৃত্যু হলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকলেও ইরানে অনেক নারী হিজাব পরা ছেড়ে দিচ্ছেন, বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশ হওয়া পুলিশের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথাকথিত এসব ‘স্মার্ট ক্যামেরা আর অন্যান্য যন্ত্র’ ব্যবহার করে হিজাব না পরা নারীদের শনাক্ত করা হবে।

এরপর হিজাব আইন ভঙ্গ করা নারীদের ঠিকানায় কাগজপত্র এবং সতর্ক করে বার্তা পাঠানো হবে।

ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী আইনগতভাবে নারীদের চুল এবং মুখমণ্ডল আবৃত করে হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ওই বিপ্লবের একটা বড় লক্ষ্য ছিল নারীদের খোলামেলা সাজপোশাক বন্ধ করা। যদিও সেসময় ইরানের অনেক নারীই ইসলামি রীতি অনুযায়ী পোশাক পরতেন, কিন্তু পশ্চিমাপন্থী শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভিকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনের আগে তেহরানের রাস্তায় নারীদের খাটো স্কার্ট পরে এবং মাথা না ঢেকে চলাফেরা করতে দেখা যেত।

আয়াতোল্লাহ খোমেইনি ১৯৭৯ সালের ৭ই মার্চ ডিক্রি বা নির্দেশনামা জারি করেন যে, সব নারীকে তাদের কর্মক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে হিজাব পরতে হবে এবং নারীরা মাথা না ঢাকলে তার বিচারে সেইসব নারী ‘নগ্ন’ বলে গণ্য হবেন।

ওই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় পরদিনই বিক্ষোভ জানাতে তেহরানের রাস্তায় জড়ো হয়েছিলেন এক লাখের ওপর মানুষ, যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী।

এরপর ১৯৮১ সালে নারী ও কিশোরীদের ইসলামি রীতি অনুযায়ী আব্রু রক্ষা করার উপযোগী পোশাক পরা আইনত বাধ্যতামূলক করা হয়।

তাতে বলা হয় নারীদের চাদর পরতে হবে অর্থাৎ তাদের পা অবধি পুরো শরীর ঢাকা ঢিলা পোশাক পরতে হবে এবং তার সাথে পারলে নিচে ছোট একটা স্কার্ফ পরতে হবে।

অথবা পুরোদস্তুর হিজাব এবং তার সাথে লম্বা হাতা ওভারকোট দিয়ে শরীর ঢাকতে হবে।

কিন্তু গত বছর মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর গড়ে ওঠা তীব্র আন্দোলনের পর এখন কর্তৃপক্ষ নতুন করে নজরদারি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিচ্ছে।

এখন যে নারীরা পোশাক সংক্রান্ত নিয়ম ভঙ্গ করেন, তাদের জরিমানা অথবা গ্রেপ্তারের শিকার হতে হয়।

হিজাব না পরার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর গত বছর পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যু হলে ইরান জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।

শনিবার পুলিশের ওই বিবৃতিতে পর্দা করাকে ‘ইরানি জাতির সভ্যতার ভিত্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের গুরুত্বের সঙ্গে এই আইন মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ইরানে পর্দা না করা নারীদের ওপর জনগণের আক্রমণের ঘটনা একেবারে বিরল নয়। গত সপ্তাহেই ইরানের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছিল, যেখানে দেখা যায় যে, পর্দা না করার কারণে দুজন নারীর গায়ে দই ছুড়ে মারছে একজন ব্যক্তি।

পরবর্তীতে হিজাব আইন ভঙ্গ করার অভিযোগে ওই নারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। দই ছুড়ে মারা ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে ইরানের পুলিশ।

গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে। তারপরেও শরিয়া আইন আরও জোরালোভাবে কার্যকর করার জন্য দাবি করে যাচ্ছে ইরানের কট্টরপন্থীরা।

গত সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট এব্রাহিম রাইসি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন যে, ‘ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার’ অংশ হিসাবে ইরানের নারীদের অবশ্যই হিজাব পড়তে হবে।

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেন মোহসেনি-ইজেই শুক্রবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নারীদের আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করার জন্য ধরপাকড় কোন উপায় হতে পারে না।

তিনি বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে সাংস্কৃতিক উপায়ে… আমরা যদি গ্রেপ্তার করে আর কারাগারে পাঠিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে চাই, তাহলে আমাদের তার জন্য মূল্য চুকাতে হবে। কিন্তু তারপরেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেখতে পাওয়া যাবে না।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button