Bangla News

প্রকৃতির কোলে অভিনব আর্থ হাউস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রকৃতির কোলে, মাটির মধ্যে ভবন। অথচ আলো বাতাসের অভাব নেই। জ্বালানি সাশ্রয়ের ফলে পকেটের উপর চাপ কমছে। এমন বহুমুখী সুবিধা এনে দিচ্ছে ‘আর্থ হাউস’। একাধিক স্থপতি এমন নির্মাণের পথ বদলে দিচ্ছেন।

সুইজারল্যান্ডের স্থপতি পেটার ভেচ গত ৫০ বছর ধরেই প্রকৃতির মধ্যে বাড়িঘর তৈরি করে আসছেন। গোটা ইউরোপজুড়ে তিনি প্রায় একশটি ‘আর্থ হাউস’ তিরি করেছেন। যেমন মাটির ঢিপির মধ্যে ভবন। কাজের পরিবেশ ভালো। জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি সবুজের সমারোহও বাড়তি আকর্ষণ।

সুইজারল্যান্ডের স্থপতি পেটার ভেচ

পেটার ভেচ বলেন, ‘এই নির্মাণ পদ্ধতিতে আমার অনেক কম উপাদানের প্রয়োজন হয়। নিখুঁত পরিমাপও চাই না। একেবারে সেন্টিমিটার ধরে কাজ করতে হয় না বরং অনুভূতি অনুযায়ী লাগালেই চলে। শিশুরা যেমন বালুর স্তূপে দূর্গ বানায়। সৃজনশীলতা দেখিয়ে তোরণ কিছুটা উপরে রাখা যায়।’

পেটার ভেচ কংক্রিট দিয়েই তাঁর ‘আর্থ হাউস’ তৈরি করেন। অন্য স্থপতিরা সাধারণত প্রাকৃতিক উপাদানই বেশি ব্যবহার করেন। ভবন ও প্রকৃতির মধ্যে বিভাজন প্রায় চোখেই পড়ে না। সেগুলো প্রকৃতিরই অংশ হয়ে ওঠে।

পেটার ভেচ কংক্রিট দিয়েই তাঁর ‘আর্থ হাউস’ তৈরি করেন।

পেটার বলেন, ‘যেমন এখানে ৫০ সেন্টিমিটার পুরু মাটির স্তর রয়েছে, উপর দিকে এক মিটার, ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ঢাকা রয়েছে। এর ফলে অনেক সবুজ অংশ পাওয়া যায়, অনেক কম অংশ সিল করতে হয়। আমরা আবার গাছপালার জায়গা সৃষ্টি করতে পারি।’

কংক্রিটের জঙ্গলের বদলে সবুজ ঢিপি। কিন্তু বাইরেটা এমন হলেও মাটির নীচের ভবনের ভেতরে আলো, শীতাতপ ও উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর হয়? গেয়ার্ড হানসেনও প্রায় ৩০ বছর ধরে ‘আর্থ হাউস’ নির্মাণ করছেন। তিনি কংক্রিটের বদলে মাটির মোড়কে ঢাকা কাঠের মডিউল ব্যবহার করেন।

কংক্রিটের জঙ্গলের বদলে সবুজ ঢিপি।

গেয়ার্ড বলেন, ‘ভবনটি আসলে ‘প্যাসিভ হাউস’ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, খুব ভালো জানালা, খুব ভালো ইনসুলেশনও রয়েছে। তবে মাটিও ভবনটির তাপমাত্রার উপর বড় প্রভাব রাখে। নীচের দিকে চার মিটার ‘স্লোপ এমব্যাংকমেন্ট’ রয়েছে।

ছাদের উপর শুধু সবুজের স্তর নয়, বেশ পুরু মাটির স্তর রয়েছে। ফলে গ্রীষ্মে ভেতরে মনোরম শীতল পরিবেশ থাকে। আর শীতকালেও বেশি হিটিংয়ের প্রয়োজন হয় না। হিটিংয়ের জন্য নামমাত্র ব্যয় হয়।’

ছাদের উপর শুধু সবুজের স্তর নয়, বেশ পুরু মাটির স্তর রয়েছে।

আনা ক্নর ছয় বছর ধরে সপরিবারে এমন এক ‘আর্থ হাউস’ এ বাস করছেন। প্রথম দর্শনেই তিনি সেই ভবনের প্রেমে পড়েছিলেন। ভবনটি দশ মিটার চওড়া এবং মাটির নীচে শিকড় ও পানি নিরোধক বিশেষ মোড়ক দিয়ে ঢাকা। সামনে ও পেছন দিকে তিনটি করে কাচের স্তরের বিশাল জানালা রয়েছে।

‘আর্থ হাউস’ এর মালিক আনা ক্নর বলেন, ‘নির্মাণের সময় বাসাটি হয়তো কিছুটা অন্ধকার হবে বলে আমাদের মনে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। আমার মতে, ‘আর্থ হাউস’ শব্দটি শুনলে সবার আগে মানুষের মনে সেই বিষয়টি ভেসে ওঠে। মনে হয় অন্ধকার ও বদ্ধ জায়গা। কিন্তু এখানে যথেষ্ট আলো আছে এবং ভবনটি স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

ভবনটি দশ মিটার চওড়া এবং মাটির নীচে শিকড় ও পানি নিরোধক বিশেষ মোড়ক দিয়ে ঢাকা।

হানসেন নামের নির্মাণ কোম্পানি ভবনটির কাঠের মোড়ক সরবরাহ করেছে। কোম্পানি সেটি বসানোর দায়িত্বও নিয়েছে। ক্নর পরিবার ভবনের ভেতরের কাজ নিজেরাই করেছে। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রথাগত পারিবারিক ভবনের তুলনায় অনেক বেশি ব্যয় হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে মাটির স্তরের নীচে বাস করার অভিজ্ঞতা কেমন? আনা ক্নর মনে করেন, ‘ভবনের ছাদ যে ভালো সেটা আমরা টের পাই, কারণ জ্বালানি ও হিটিংয়ের ব্যয় খুব কম। হিটিং ও গরম পানির জন্য মাসে ৬০ ইউরো মাসুল গুনতে হয়। মাটি দিয়ে ঢাকা থাকায় আমাদের বাড়ি দ্রুত গরম হয়ে ওঠে না। মাটির স্তর শীতকালেও আমাদের উষ্ণতা দেয়।’

গোটা ইউরোপজুড়ে তিনি প্রায় একশটি ‘আর্থ হাউস’ তিরি করেছেন।

ঢিপির মধ্যে এমন ইনসুলেটেড ভবন সাধারণ জ্বালানি ব্যয়ের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সাশ্রয় করে। সেইসঙ্গে মাটির স্তর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ভবনের কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমিয়ে দেয়। আনা ক্নর মনে করিয়ে দেন, ‘খননের সময়ে যে মাটি তোলা হয়েছিল, সেগুলো ছাদের উপর ছড়িয়ে তার উপরটা সবুজ করে তুলেছি।’

আনা ক্নর ‘আর্থ হাউস’ এ থাকার একাধিক সুবিধা টের পাচ্ছেন। তবে এমন ভবনে একাধিক তলা রাখা সম্ভব নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে অ্যাঙ্গেল অত্যন্ত খাড়া হতো, তার উপর মাটি ঢালা সম্ভব হতো না।

‘আর্থ হাউস’ জার্মানিতে এখনো অত্যন্ত বিরল। কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা, জ্বালানি সাশ্রয়, নির্মাণের ক্ষতিপূরণের মতো বিষয় ভবিষ্যতে মডেল হয়ে উঠতে পারে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button