বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে তথ্য সংগ্রহের নামেঃমির্জা ফখরুল

আজ বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের নামে পুলিশ দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন,পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের নামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। পুলিশের এ ধরনের কর্মকাণ্ড নাগরিকের ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ, যা সংবিধানের ৩১, ৩২ ও ৪৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ আইনবিধি কিংবা অন্য কোনো আইনেও সমর্থনযোগ্য নয়।তিনি বলেন, এটা ক্ষমতাসীনদের একটা চলমান প্রক্রিয়া—ভীতি প্রদর্শন। যখনই আন্দোলন শুরু হয়, তখন পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব বিষয় জানতে চায়।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার নামে হয়রানি করছে। এতে দেশে বিরাজমান ভয়ের পরিস্থিতিকে আরও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ রাজনৈতিক কর্মীদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের তথ্য সংগ্রহেও লিপ্ত রয়েছে। এমন কার্যক্রমে সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ আইন বা পুলিশবিধি কিংবা অন্য কোনো আইনে সমর্থনযোগ্য নয়। পুলিশের এমন কার্যক্রম একদিকে যেমন নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ন করছে, অন্যদিকে নাগরিকের আইনি অধিকার ভোগ এবং তার ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়।

তিনি বলেন, চলমান অবস্থায় এটা দৃশ্যত প্রতীয়মান হয়, পুলিশ বিএনপিসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের উদ্দেশ্যে তাদের গণহারে শুধু নাম ঠিকানা নয়, তাদের পেশা, সন্তান ও সম্পত্তির বিবরণসহ চৌদ্দ গোষ্ঠীর যাবতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে যা দেশে বিরাজমান আতঙ্কের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে। বিএনপি এ অবস্থার অবসান চায়। ফখরুল বলেন, আমরা পুলিশ কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি, এভাবে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি বন্ধ করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তারা তাদের সংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবেন।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২ ও ৪৪ নম্বর ধারার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এসব ধারায় একজন নাগরিকের যুক্তিসংগত কারণে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করবে বলে বলা হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিত ভিন্ন।কিন্তু ফৌজদারি কার্যবিধির আওতায় যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা কাউকে গ্রেপ্তার করার এখতিয়ার ধারণ করেন বা আমলযোগ্য অপরাধের সম্পৃক্ততার যুক্তিসংগত কারণ পান এবং সেই ব্যক্তি যদি পালানোর চেষ্টা করেন কিংবা তাঁর শান্তিশৃঙ্খলা ভঙ্গ করার কোনো আশঙ্কা থাকে বা রেলওয়ে, কেনাল, টেলিগ্রাফ অথবা সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা ৪৪ ধারায় উল্লিখিত দণ্ডবিধির কোনো অপরাধ সংঘটনের তথ্য থাকে, তবেই কেবল ওই পুলিশ কর্মকর্তা একজন নাগরিকের সহযোগিতা চাইতে পারেন, অন্য কোনো কারণে নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তাঁর বাসাতেও পুলিশ এসেছিল তথ্য সংগ্রহে। কিন্তু তারা এ–সংক্রান্ত কোনো চিঠি দেখাতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, যখন আমরা কর্মসূচি শুরু করেছি, সমাবেশ বেশি হচ্ছে, তখন থেকে তারা এক কাজগুলো শুরু করেছে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে যখন জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে, তখন সেখানে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোর উদ্দেশ্য, মানুষকে হয়রানি করার জন্য, আন্দোলনকে দমন করার জন্য এটাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে তারা।’

সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, তাঁর কাছেও পরিবার-সন্তান ও তাঁর ব্যক্তিগত তথ্য চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনি বলেন, ‘আগে কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের নেতাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে খোঁজখবর নেওয়া হতো। এখন আন্দোলন যত বিস্তৃত হচ্ছে, একেবারে ঢাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ের লোকজন, উপজেলা পর্যায়ের লোকজনের ব্যাপারেও তথ্য নেওয়া হচ্ছে। মুশকিল হয়েছে কি, একবার নিলে তো হতো; এটা যে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে, সেটা বোঝা যায় এভাবে, বারবার, একবার একজন নেয়, তারপর আরেকবার আরেকজন নেয়।’

সাফ জয়ী নারী ফুটবলারদের দেশের জন্য গর্ব বয়ে আনায় বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মির্জা ফখরুল। রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার পরও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ জাতির সঙ্গে মশকরা করছে কমিশন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।

বাংলা ম্যাগাজিন /এমএ

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button