আওয়ামী লীগফরিদপুরবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

ফরিদপুরে যুবলীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মিসভা পণ্ড

ফরিদপুরে যুবলীগের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মিসভা পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তত ২৭ জন কর্মী আহত হয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে শহরের অম্বিকা মেমোরিয়াল হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মিসভা চলছিল অম্বিকা মেমোরিয়াল হলের ভেতরে। ওই সভা চলাকালে হামলা চালায় যুবলীগ। ফলে সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। তিনি বলেন, হামলার আগে ওই হলরুমের আশপাশে পুলিশ ছিল না। তবে পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ওরফে মিঠু এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মতিউর রহমান শামীমের নেতৃত্বে রামদা, রড, লাঠি নিয়ে ৫০ থেকে ৬০ জন এ হামলা চালান। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম জিলানী ও কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইয়াছিন আলী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তবে হামলাকারীরা তাঁদের ওপর আঘাত না করে বেরিয়ে যাওয়ার পথ করে দেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্সিলর মতিউর রহমান বলেন, ‘অম্বিকা হলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভা চলছিল। জেলা যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ওখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সমবেত হয়েছিলেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও মারামারি হয়। পরে আমি শুনি হলে হামলা হয়েছে, ভাঙচুর হচ্ছে।

এ খবর শুনে আমি পৌরসভার মালিকানাধীন হলটি রক্ষা করতে এগিয়ে যাই। খবর দিই ওসি কোতোয়ালিকে।’ মতিউর রহমান দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘আমি হামলা করিনি। বরং হামলার কবল থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের রক্ষা করেছি। এটা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কও জানেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অম্বিকা হল চত্বরে কর্মিসভা উদ্বোধনের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন আসন গ্রহণ করেন। এ সময় হামলার ঘটনা ঘটে। প্রথমে যুবলীগের ১০-১৫ জন নেতা হলরুমে হামলা করলে প্রতিরোধ করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীরা।

এর তিন-চার মিনিট পর যুবলীগের আরও ৫০-৬০ জন নেতা-কর্মী ওই কর্মিসভায় হামলা করেন। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হন। পিটিয়ে আহত করা হয় রাব্বী ইসলাম ওরফে শুভ (১২) নামের মাইক অপারেটর এক শিশুকেও। পরে হামলাকারীরা ওই হলরুমের চেয়ার, সাউন্ডবক্স, মাইক্রোফোন ভাঙচুর করেন।

জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান বলেন, দলীয় যেকোনো কর্মসূচির আগে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অম্বিকা হলের সামনে জড়ো হন। পরে এখান থেকে মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যান। আজ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে সমবেত হন যুবলীগ কর্মীরা। তার আগে মিছিল বের করার জন্য অম্বিকা হলের সামনে এসেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তবে আমরা জানতাম না সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভা চলছে। আমি উপস্থিতি থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের হল থেকে বের হতে সাহায্য করেছি, কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় কেউ আহত বা চেয়ার-সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করা হয়েছে কি না, তা আমার জানা নেই।’

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে যুবলীগের আহ্বায়ক জিয়াউল হাসান ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর মতিউর রহমানের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, এ হামলায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান ওরফে হাফিজ, সদর উপজেলা আহ্বায়ক আবুল কালাম, সালথা উপজেলা সদস্যসচিব মামুন হাসান, সদরের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ইদ্রিস ব্যাপারী, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আহ্বায়ক রেজাউল তালুকদারসহ অন্তত ২৭ জন আহত হন। এর মধ্যে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাসপাতাল ফরিদপুরে তিনজন ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা ওই দুই হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া বলেন, পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার পরও ওই হলে ও তার আশপাশে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। হামলাকারীরা অত্যন্ত নির্মমভাবে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছেন।

ওই কর্মিসভার সজ্জা ও সরবরাহের কাজ পাওয়া ফরিদপুরের লাকি ডেকোরেটরের স্বত্বাধিকারী সালাম শেখ বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মিসভার জন্য ১৫ হাজার টাকায় চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাড়া দেন। কিন্তু ব্যাপকভাবে চেয়ার ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক চেয়ার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে তাঁর প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আরও বলেন, হলরুমের মধ্যে এ কর্মিসভার জন্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। পৌরসভার কাছ থেকে হলটি ভাড়া নেওয়া হয়। তবে হামলার সময় ওই হলরুম ও তার আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য ছিলেন না। হামলার পর ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button