এক্সক্লুসিভজাতীয়নির্বাচনবাংলাদেশরাজনীতি

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমনপীড়নঃ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের ওপর সরকারের দমনপীড়ন ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলা বেড়ে চলেছে। আইনের প্রতি সম্মান, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখানো এবং বিরোধী সমর্থকদের সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষা করা।

গতকাল সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘বাংলাদেশ: রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমনপীড়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলে আসছেন, বাংলাদেশ একটি পরিণত গণতান্ত্রিক দেশ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে সক্ষম। কিন্তু আগের নির্বাচনগুলোয় বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতা ও হামলা এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। সাম্প্রতিক এসব রাজনৈতিক হামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এক অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগে গণগ্রেপ্তার ও বিরোধী দলের সদস্যদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান সহিংসতা আর ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে, যা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রায়শ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব যথাযথভাবে তদন্ত করতে এবং বিরোধীদের সভা ও সমর্থকদের ওপর হামলাকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্য ও সমর্থকদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে।

সংস্থাটি বলেছে, জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২২ আগস্ট থেকে শুরু বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েক শ।

এ ছাড়া সম্প্রতি অন্যান্য সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি নেতা–কর্মীদের হত্যার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া যাচ্ছে। সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার জন্য উভয় পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। অবশ্য, পুলিশ শুধু বিরোধী সমর্থকদের গণহারে গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু সহিংস হামলায় জড়িত থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, বিএনপির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, তাদের নেতা–কর্মীদের নামে অন্তত ২০ হাজার মামলা হয়েছে। বেশির ভাগ মামলায় আসামিরা অজ্ঞাতনামা। বিরোধী মত দমনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে নাম উল্লেখ না করে বহু মানুষের বিরুদ্ধে এমন মামলা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব মামলায় যে কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখানো বা গ্রেপ্তার করার হুমকি দিতে পারছে পুলিশ। এতে করে মামলায় নাম নেই এমন কাউকে চাইলে গ্রেপ্তার করা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব ব্যক্তি জামিন পাননা।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আওয়াল। তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ‘আমার ওপর হামলাকারীদের আমি চিহ্নিত করতে পারব। তাঁরা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার বিভিন্ন কমিটির সদস্য। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও আমাকে কোনো সাহায্য করেনি। হামলাকারীদের থামানোর চেষ্টা করেনি।’

হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ব্যক্তিদের আসামি করে দায়ের এসব মামলাকে ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। তাঁদের হুমকি ও হয়রানি করছে। এমনকি সরকারবিরোধী যাঁরা দেশের বাইরে আছেন, তাঁদের পরিবারকেও নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button