আওয়ামী লীগজাতীয়বাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

বিএনপি কোন ধরনের উসকানিতে পা দেবে না

মাত্র এক মাসের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ১৬টি বড় ধরনের সমাবেশ করতে পেরে বিএনপি এখন বেশ উজ্জীবিত। এই সময়ের মধ্যে দলটির মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিও সাড়া ফেলেছে।দলটির নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি এখন ঢাকার বাইরে।

আজ ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহরে বিভাগীয় জনসভায় বড় ধরনের জনসমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে প্রায় দুই মাসব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে দলটি, যা শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহাসমাবেশ দিয়ে। এরপর ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের কর্মসূচিতে যেতে চায় বিএনপি।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চারজন নেতা জানান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে দলের নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সব রাজনৈতিক কর্মসূচি একাই পালন করবে বিএনপি।

এসব কর্মসূচির ফাঁকে ফাঁকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার সংলাপ শেষ করে আনা হবে।এসব সংলাপে ‘যুগপৎ আন্দোলনের’ প্রধান দাবিগুলো চূড়ান্ত করার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এরপর সরকারবিরোধী ‘যুগপৎ’ আন্দোলনের সূচনা করতে চান তাঁরা।

তবে সামনের দিনগুলোতে বিএনপির কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দল ‘বাধা-হামলা’ করতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন নেতারা। পাশাপাশি নিজেদের কোনো ‘ভুলে’ মাঝপথে আন্দোলন পথ হারায় কি না, সে শঙ্কাও রয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে।

আজ চট্টগ্রামের পর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে জনসভা হবে। এরপর ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে এবং ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ হবে।

তবে এসব কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত কতটা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করা যাবে, তা নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কারও কারও মধ্যে সংশয় আছে। তাঁরা মনে করছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যেভাবে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষণীয়ভাবে বাড়ছে, তা সরকারকে বেশ চাপে ফেলেছে। এ কারণে ক্ষমতাসীনেরা কর্মসূচি পণ্ড করতে ‘অজুহাত’ খুঁজতে পারেন অথবা বিএনপিকে সহিংস করে তোলার ‘উসকানি’ দিতে পারেন।

বিএনপি সে ধরনের উসকানিতে পা দেবে না বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘ওরা আমাদের ওই দিকে (সহিংসতা) নিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো সেদিকে যাচ্ছি না। আমরা সে পথে যাব না।’

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, এ মুহূর্তে দলের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের দিকে। এসব সমাবেশ সরকারবিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের ভিত হিসেবে গড়তে চান দলের নীতিনির্ধারকেরা। একই সঙ্গে এসব কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চলমান আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া বিভাগীয় সমাবেশগুলোর মাধ্যমে দলীয় সক্ষমতা এবং দুর্বলতা যাচাই করে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তাই সমাবেশগুলোতে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং সাধারণ সমর্থকদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে আশপাশের জেলাগুলোতে দলীয় কর্মী–সমর্থকদের পাশাপাশি বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যেও যাতে উদ্দীপনা তৈরি হয়, সে চেষ্টা করা হবে।

অবশ্য আন্দোলন যখন গতি পাচ্ছে, তখন দলটির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতার ‘অসংযত’ বক্তব্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে এবং বাইরে সমালোচনা হচ্ছে। ৮ অক্টোবর রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়।

এর এক দিন পর দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, শিগগির তারেক রহমান দেশে আসবেন। পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।এ ধরনের বক্তব্য আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। এসব বক্তব্য এ মুহূর্তে কৌশলগতভাবেও বিচক্ষণতার পরিচয় দেয় না বলে মনে করছে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল দলগুলোও।

এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বক্তব্যে আন্দোলনের প্রধান বিষয়গুলো ঢাকা পড়ে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি হয়। আন্দোলনেও বিভক্তি চলে আসতে পারে। উল্লেখ্য, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলতে গত জুন মাসে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।

বিএনপির নিজস্ব মূল্যায়ন হচ্ছে, গত এক মাসে ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণের সমাবেশগুলোতে (হাজারীবাগ ছাড়া) তুলনামূলকভাবে লোকসমাগম বেশি হয়েছে। উত্তরে আটটি এবং দক্ষিণে আটটি সমাবেশ হয়েছে। এর বাইরে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় মোমবাতি প্রজ্বালনের কর্মসূচি ছিল ব্যতিক্রম। কিন্তু এ কর্মসূচিতে উপস্থিতি ছিল কম।

বিশেষ করে বনানীতে এ কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ ২০০ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। আর পল্লবী (১৫ সেপ্টেম্বর) ও বনানীতে (১৭ সেপ্টেম্বর) হামলার পর মহাখালীর সমাবেশে (২১ সেপ্টেম্বর) প্রথম নেতা-কর্মীরা লাঠি হাতে সমাবেশে যোগ দেন। এরপর থেকে সব সমাবেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ক্ষমতাসীনদের হামলা এড়াতে লাঠি হাতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়, যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক ও নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে রাজপথে আবার সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, ‘আজকাল বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা দেখা যাচ্ছে, এটা কিসের আলামত?’

বিএনপির চলমান কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীন নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ গণ–আন্দোলন গড়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা।পাশাপাশি অন্য দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য গড়ার কাজ চলছে। আন্দোলনের মূল দাবিগুলো শিগগির উপস্থাপন করা হবে। এরপরও সরকার যদি কর্ণপাত না করে, তাহলে যুগপৎ আন্দোলনে নামবে বিএনপি।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button