বিশ্ব সংবাদমধ্যপ্রাচ্য

নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড়, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও ইরানে বিক্ষোভ অব্যাহত

নিরাপত্তা বাহিনীর ধরপাকড়, দমন-পীড়ন সত্ত্বেও ইরানে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতেও ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সেখানে বেশ কয়েকটি শহরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবারের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ফ্রান্সভিত্তিক কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সানানদাজ, মারিভান, বাহেন, ইলাম, সাকেজ শহরে বিক্ষোভের সময় কমপক্ষে ৩৭ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৯ জনকে। এর একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইলাম শহরে এক বিক্ষোভকারীকে পেটানো হচ্ছে।

ইরানে বিক্ষোভ হয় মূলত রাতে। বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির সানানদাজ, মারিভান, বানেহ, ইলাম, সাকেজ, নিশাপুর, বুকান, কারমানসহ বেশ কিছু শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির কুজেস্তান প্রদেশের আহভাজ শহরের বিক্ষোভের একটি ভিডিও ছড়িয়েছে। এতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছেন।

এদিকে কুর্দিস্তান প্রদেশের বানেহ শহরে ধারণা করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করতে পিকআপভ্যান নিয়ে ছুটছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ওই পিকআপভ্যান থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে।

ইরানে বিক্ষোভ শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি সাংবাদিকেরা সেখানে খবর সংগ্রহ করতে পারছেন না। বিদেশি সাংবাদিকেরা মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন, এই অভিযোগ তুলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ফলে বিক্ষোভের অনেক তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না।

ইরানের চলমান বিক্ষোভে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছে  অনেক শিশু-কিশোর। এমনকি স্কুল থেকেও শিশুদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের কোথায় রাখা হয়েছে সেটি এখনো অজানা অনেক অভিভাবকের কাছে। এ ছাড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেক শিশুই নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন এইচআরএএনএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ২৬টি শিশু এই বিক্ষোভে প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শিশুর বয়স ১২ বছর। আর ইরানের চিলড্রেন রাইটস প্রোটেকশন সোসাইটির দেওয়া তথ্য অনুসারে, কমপক্ষে ২৮টি শিশু নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই সিস্তান ও বেলুচিস্তানের মতো অনগ্রসর প্রদেশের।

ইরানের চলমান বিক্ষোভের সঙ্গে পশ্চিমা বেশ কয়েকটি দেশের নেতা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সর্বশেষ গত বুধবার এই বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারী ও তরুণ-তরুণীদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, বিক্ষোভকারীদের পাশে আছে ফ্রান্স। এ ছাড়া বিক্ষোভে যে দমন–পীড়ন চালানো হচ্ছে, তারও নিন্দা জানান তিনি।

মাখোঁর এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে ইরান। এ প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এক বিবৃতিতে বলেন, ফ্রান্সের নেতার বক্তব্য হস্তক্ষেপের শামিল। এর মধ্য দিয়ে ‘উগ্র এবং আইন ভঙ্গকারীরা’ উৎসাহ পাবেন। মাখোর এই বক্তব্যকে ‘কপটতা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন তিনি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সেখানে শিশুদের লক্ষ্য করে সর্বাত্মক অভিযান চালানো হচ্ছে। একে ‘লাগামহীন নৃশংস দমন–পীড়ন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বিক্ষোভে কমপক্ষে ২৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক নিহত হয়েছে। তবে প্রতিটি সংগঠনই ধারণা করছে, প্রকৃত সংখ্যাটা অনেক বেশি।

হিজাব–সংক্রান্ত নীতি ভঙ্গ করার অভিযোগে দেশটির নীতি পুলিশ গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাসা আমিনি নামের এক তরুণীকে আটক করেছিল। পুলিশি হেফাজতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়। মাসার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে।

তবে পুলিশ বলছে, এই নারী তাদের হেফাজতে থাকলেও ‘হৃদ্‌যন্ত্র বিকল’ হয়ে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভের ২৯তম দিন ছিল শুক্রবার।মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিক্ষোভে এ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button