আইন-আদালতবাংলাদেশবিএনপিরাজনীতি

মামলা,গ্রেপ্তার-রিমান্ড ও হাজিরায় পর্যুদস্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা

নিত্যনতুন মামলা, গ্রেপ্তার-রিমান্ড ও হাজিরায় এখন পর্যুদস্ত রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা। হঠাৎ করেই মামলা ও গ্রেপ্তারের চাপে পড়েছে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পুরোনো মামলাও নতুন করে সচল হচ্ছে।

এরই মধ্যে গতকাল সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর দুর্নীতির মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মামলার সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪টি। মোট আসামি ৩৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫১ জন। একই সময়ের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১ হাজার ২০৪ জন গুম থাকলেও ৭১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। বর্তমানে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৭২ জন নেতাকর্মী গুম রয়েছেন। এ ছাড়া গত ২২ আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী আহত ও জখম হয়েছেন।

দলের সিনিয়র নেতাদের দাবি, বিএনপি যখন আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন মামলা দিয়ে বিএনপিকে কাবু রাখতে চায় সরকার। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অনেক নেতাকেই অযোগ্য ঘোষণা করতে এই পথে হাঁটছে সরকার।

নেতাকর্মীদের চাপে রাখতে সরকারের নির্দেশে নতুন করে মামলা দিচ্ছে পুলিশ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় গণসমাবেশের পর বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীর নামে নতুন করে মামলা হয়েছে। ফলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তাদের অভিযোগ, কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। অথবা অজ্ঞাতপরিচয় মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে চার্জশিট। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে রায়ের প্রক্রিয়া। রাজনৈতিক মামলায় আগাম জামিন আর জামিন-পরবর্তী হাজিরার জন্য আদালতপাড়ায় ব্যস্ত বিএনপিসহ বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী। নতুন ও পুরোনো মামলায় হয়রান বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতাকর্মীরা। আদালতে হাজিরা দিয়েই অনেক নেতাকর্মীর দিনের সূচনা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট থেকে গতকাল (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত নতুন মামলা হয়েছে ২টি। এর মধ্যে গত ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে দলটির কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

এরপর গত ২২ অক্টোবর খুলনায় বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের অভিযোগে ওই দিন রাতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে একটি এবং খুলনা রেলওয়ে থানায় ১৫০-১৭০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়।

গত ২৬ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। সেদিন রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদ্দাম হোসেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আহ্বায়ক মনজুর আলম তালুকদারসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

হঠাৎ করে মামলা ও গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের চরিত্র কখনো বদলায় না। হয়তো সাময়িক বিরতি দেয়। যখন দেখে যে, বিরোধী শক্তি সোচ্চার হচ্ছে, তখনই ফের অত্যাচার-নিপীড়ন শুরু করে। আকস্মিকভাবে মামলা ও গ্রেপ্তার তারই প্রমাণ।

সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন মামলা দিচ্ছে এবং পুরোনো মামলা সচল করছে। মূলত ফের একতরফা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যেই এসব মামলা হচ্ছে; কিন্তু মামলা-হামলা করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা যাবে না। বিএনপি মামলা-হামলাকে ভয় পায় না।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুর দুর্নীতির মামলা সচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে।

ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে বিচার শুরুর জন্য বিষয়টি সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে উত্থাপন করে। সে অনুযায়ী গতকাল সোমবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে অধ্যক্ষ দুলুর মামলাটির ওপর শুনানির পর আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে ফের শুনানি ও আদেশের দিন ধার্য হয়েছে। এ ছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মামলাটির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।

দলের সিনিয়র নেতাদের দাবি, বিএনপি যখন আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন মামলা দিয়ে বিএনপিকে কাবু রাখতে চায় সরকার। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অনেক নেতাকেই অযোগ্য ঘোষণা করতে এই পথে হাঁটছে সরকার

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button