অগ্নিকান্ডঅপরাধদুর্ঘটনাবরিশাল

মা ইলিশ রক্ষার অভিযানের ট্রলারে আগুন,অভিযোগ ইউএনও বিরু‌দ্ধে

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বরিশালের বাবুগঞ্জে উপজেলার কেদারপুর খেয়াঘাটে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ব্যবহৃত একটি ট্রলার আগুনে পুড়ে গেছে। নি‌র্দেশ অমান‌্য করায় মা ইলিশ সংরক্ষ‌ণ অভিযানে ব‌্যবহৃত ট্রলার পু‌ড়ি‌য়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরু‌দ্ধে। যদিও ইউএনও নুসরাত ফা‌তিমা একে আখ্যা দিয়েছেন ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে।

ঘটনাটি নিয়ে একটি পক্ষ বলছে, অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে আনসার সদস্যরা ডিজেল ছিটিয়ে ট্রলারটি পুড়িয়ে দিয়েছেন। আরেকটি পক্ষ বলছে, দুর্ঘটনাবশত ট্রলারে আগুন লেগেছিল।

ট্রলারের মা‌ঝি ও মা‌লিক আনোয়ার ‌হো‌সেন ব‌লেন, ‘আমার ট্রল‌ার ভাড়া ক‌রে নি‌ছি‌লেন ইউএনও ম‌্যাডাম।‌ আমা‌রে ভা‌লো না লাগ‌লে ছাইড়া দে‌বে। আমার ট্রলার পোড়া‌নোর তো দরকার ছি‌ল না।’ এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের ইউএনও নুসরাত ফাতিমা।

তিনি জানান, গত ১৪ বছর ধরে বি‌ভিন্ন অভিযানিক দলের সদস্যদের পরিবহন করছেন। বৃহস্প‌তিবার অভিযান শেষে তীরে ভিড়তে নিষেধ করার বিষয়টি জানানোর জন্য মৎস্য কর্মকর্তা ফোন করেছিলেন, কিন্তু ইঞ্জিনের শব্দে কল শুনতে না পাওয়ায় তা রিসিভ করতে পারেননি।

আনোয়ার আরও জানান, ট্রলার ঘাটে ভেড়ার পর মৎস্য কর্মকর্তা ও ইউএনও তাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। তখন তিনি ট্রলার থেকে চলে যান। পরে ইউএনও তার ট্রলারে আগুন দিয়েছেন। ট্রলারটি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিলেন।

জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ‘আমি যত দূর শুনেছি, বিষয়টি একটি দুর্ঘটনা। এরপরও আমরা প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনের জন্য তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্তে কেউ দোষী হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনা সরেজমিন যাচাই করতে আমি বাবুগঞ্জে যাচ্ছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২ জন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জাল পোড়ানোর সময় হঠাৎ ইউএনও ট্রলারটির সামনে যান এবং তাঁর দেহরক্ষী আনসার সদস্যরা ট্রলারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। তবে এর আগেই তুচ্ছ ঘটনায় ইউএনও আনেয়ারের ওপর চটে গেলে তিনি (আনোয়ার) পালিয়ে যান। তাঁরা বলছেন, আনোয়ার জব্দ করা কিছু মাছ সরিয়ে ফেলেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে আনসার সদস‌্য মামুন হাওলাদার ব‌লেন, ‘জব্দকৃত মাছ যখন বিতরণ করা হ‌চ্ছিল, তখন আ‌মি পেছ‌নে তা‌কি‌য়ে দে‌খি ট্রলা‌রে আগুন জ্বল‌ছে। ইউএনও স‌্যার‌কে আমি দে‌খি‌য়ে‌ছি আগু‌নের চিত্র। ট্রলার‌টি‌তে এক‌টি গ‌্যাস সি‌লিন্ডারও ছি‌ল। তাই আগুন বে‌শি ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে‌ছি‌ল।’

বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল বলেন, ‘অভিযান শেষে ট্রলারের মাঝি জব্দ মাছের কিছু বড় ইলিশ সরিয়ে রাখে। এটিই ইউএনওর রাগের কারণ।ইউএনওর নির্দেশনা ছিল অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও ট্রলার ভেড়াবে না। মাঝি সেটা করেছে। এই কারণে ইউএনও আইনগতভাবেই আগুন ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন।’

অপ‌র‌দি‌কে বাবুগ‌ঞ্জের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জা‌নিয়ে‌ছে, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান নি‌য়ে উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পু‌লি‌শের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে নীরব দ্বন্দ্ব চল‌ছিল। ট্রলারের মা‌ঝি আনোয়ার হো‌সে‌নের বিরু‌দ্ধে জব্দ হওয়া ইলিশ বি‌ভিন্ন স্থা‌নে বি‌ক্রির খবর ছি‌ল উপ‌জেলা প্রশাস‌নের কা‌ছে। আর মা‌ঝি আনোয়ার কাজ কর‌তেন বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমা‌নের নি‌র্দেশ অনুযায়ী।

ব‌রিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক‌কে প্রধান ক‌রে তদন্ত ক‌মি‌টি গঠন করা হ‌বে‌। তদন্ত প্রতি‌বেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব‌্যবস্থা নেয়া হ‌বে।

বাবুগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার আব্দুল মালেক বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা  রাত ৯টায়  ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অজ্ঞাত।’

Flowers in Chaniaগুগল নিউজ-এ বাংলা ম্যাগাজিনের সর্বশেষ খবর পেতে ফলো করুন।ক্লিক করুন এখানে

Related Articles

Back to top button